পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ দাবিতে লংমার্চ করার মধ্যে পঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদে এক সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরি জানিয়েছেন, ইমরানের ডান পায়ে গুলি লেগেছে, সমাবেশস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। পাঞ্জাব পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, লংমার্চে হামলার ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন সাতজন।
গত শুক্রবার থেকে পাকিস্তান জুড়ে লং মার্চ শুরু করেছেন ইমরান। দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে এই যাত্রা করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার পঞ্জাব প্রদেশে সমর্থকদের উদ্দেশে লং মার্চে যোগদানের আবেদন জানাচ্ছিলেন ইমরান। তখনই তাঁর দিকে ছুটে আসে বুলেট। এদিকে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে ইমরান খান জানিয়েছেন, আল্লাহ্ আমায় আরও একটা জীবন দিলেন। আল্লাহ্র ইচ্ছায় আমি আবার লড়াই করব।
ইমরানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে হামলাকারীকে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়, এক ভিডিও বার্তায় ওই হামলাকারী বলেছেন, ‘আমি এটা করেছি কারণ ইমরান লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি তা মেনে নিতে পারছিলাম না। এজন্য তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শুধুমাত্র ইমরানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম, আর কাউকে না। তাকে মেরে ফেলার সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছিলাম। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ইমরানের উপর হামলায় দুই আততায়ী জড়িত। এক জনের হাতে পিস্তল ছিল। অন্য জনের হাতে রাইফেল ছিল। ইমরানকে লক্ষ্য করে পর পর ছয় রাউন্ড গুলি চালানো হয়।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এ হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন। আইজিপি এবং পাঞ্জাবের চিফ সেক্রেটারির কাছ থেকে এই ঘটনার বিষয়ে অবিলম্বে রিপোর্ট চাওয়ার জন্য তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া, পাঞ্জাব সরকারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনীয় সবরকম সহযোগিতা কেন্দ্র সরকার করবে বলেও শরীফ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতিতে সহিংসতার কোনও স্থান নেই।
বাঁচালেন এক যুবক : ইমরান খানকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন বছর তিরিশের এক যুবক। ইমরানের উপর যখন গুলি হামলা চালানো হচ্ছে, তখন হামলাকারীর পিছনেই ছিলেন তিনি। সেই মুহূর্তের একটি সিসিটিভির ছবিতে দেখা যায়, পিছন থেকে হামলাকারীর বন্দুক ধরা হাতটি টেনে ধরেছেন ওই যুবক। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ছয় রাউন্ড গুলি। যা হয়তো ইমরানের বুকে লাগতে পারত। তবে লাগেনি। লাগলে একা ইমরান নয়, আরও অনেকেরই প্রাণ যেতে পারত। সেই পরিণামের কথা ভেবেই ওই যুবককে নায়কের আসনে বসিয়েছেন অনেকেই। একটি টিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, তাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ইমরান সমর্থকেরা। তার ছবির নিচে ‘হ্যাশট্যাগ আওয়ার হিরো’ লিখেও পোস্ট করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইমরানের সমর্থকেরা। যদিও পাকিস্তানের কোনও সংবাদ সংস্থাই এখনও ওই যুবকের নাম বা পরিচয় জানায়নি।