ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প বিলুপ্ত হলেও বিভিন্ন মামলা থাকায় মেশিনগুলো নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার ইভিএম প্রকল্পে মেয়াদ না বাড়ানোর পর এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন ভোটযন্ত্রটি আর কোনো নির্বাচনে ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মেশিনগুলোর নিষ্পত্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংকট। কারণ, অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে মামলা হয়েছে, যেগুলোতে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। সেই মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মেশিনগুলোর ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করতে পারছে না ইসি।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় ছয়টি উপজেলায় ৫১০ সেট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন স্কুল–কলেজগুলোতে অযত্ন–অবহেলায় পড়ে আছে। সংরক্ষণের অভাবে ইভিএমগুলো প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। এই ইভিএম গুলো সংরক্ষণ ও মেরামতের আর সম্ভাবনা নেই। কারণ বর্তমান সরকার ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ানোর পর এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন ইভিএম আর কোনো নির্বাচনে ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইভিএম প্রকল্প বিলুপ্ত হওয়ার পর বিভিন্ন মামলা থাকায় মেশিনগুলো নিয়ে করণীয় নির্ধারণে তাই মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির যুগ্মসচিব মো. মঈন উদ্দীন খান গত ১৫ অক্টোবর এ সংক্রান্ত চিঠি সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ইভিএম বিষয়ে ভবিষ্যৎ করণীয় এবং বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত ইভিএম–এর গোডাউন/স্পেস ভাড়া সংক্রান্ত করণীয় নির্ধারণের জন্য তিন ধরনের তথ্য পাঠাতে হবে।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত কোনো মামলা আছে কিনা। মামলা থাকলে নির্বাচনের নাম, নির্বাচনী এলাকা, নির্বাচনের তারিখ, মামলা সংক্রান্ত বিবরণ, সংশ্লিষ্ট ইভিএমের পরিমাণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য তথ্য; ইভিএম সংরক্ষণের জন্য গোডাউন/স্পেস ভাড়া সংক্রান্ত মামলা সংক্রান্ত তথ্য; ইভিএমের জন্য ভাড়াকৃত গোডাউনের বকেয়া থাকলে তার তথ্য।
সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশে প্রথমবারের মতো যন্ত্রে ভোট নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। বুয়েটে তৈরি করা সেই মেশিনগুলো রাজশাহীর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নষ্ট হলে পরবর্তীতে ব্যালেটে ভোট নেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেই মেশিনের ত্রুটির কারণ নির্ধারণ ও মেরামতে ব্যর্থ হয় ইসি।
যার ফলে পরবর্তীতে উন্নতমানের ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে তৈরি করে নেয় সংস্থাটি। তবে সেই মেশিনের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক মতানৈক্য এবং মেরামতে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের চাপের কারণে সরকার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বন্ধ রাখে। ফলে ইসি ইভিএম প্রকল্প বাতিল করে এবং সকল নির্বাচনে ভোটযন্ত্রটির ব্যবহার থেকে সরে আসে।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তড়িঘড়ি করে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছিল ইসি। পাঁচ বছর না যেতেই এক লাখ ২০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হলে সরকার তা নাকচ করে দেয়।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এখানো ৫১০ সেট ইভিএম রয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত ইভিএমের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফ গোলাম হোসেন। তিনি জানান, ৬টি উপজেলার কিছু ইভিএম আমাদের উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে আছে। এছাড়াও কিছু উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে এবং স্কুল–কলেজে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে মীরসরাই উপজেলায় রয়েছে ১৭০সেট, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় রয়েছে ১৩০ সেট, ফটিকছড়ি উপজেলায় রয়েছে ৩০সেট, চন্দনাইশে রয়েছে ২০ সেট, পটিয়া উপজেলায় রয়েছে ২০সেট এবং আনোয়ারা উপজেলায় রয়েছে ১৪০ সেট।