বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা ১০ মিনিট। নগরীর ইপিজেড মোড়ে যাত্রী নিচ্ছিল ‘চট্টমেট্রো-জ-১১-১৮৭২’ নম্বরের শান্ত পরিবহন নামের বাসটি। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও নগরীর ১০নং রুটে চলাচলকারী বাসটি যাত্রী নিয়েছে কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করেই। একইভাবে ‘ইপিজেড স্পেশাল সার্ভিস, ‘লএমএএফ ট্রেনিং সেন্টার’ কিংবা ‘গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবহন’ নামে ব্যানার টাঙিয়েও আগ্রাবাদ ও অলংকারের উদ্দেশে যাত্রী নিয়েছে বাসগুলো। ইপিজেডের গার্মেন্টসগুলোর শ্রমিক পরিবহনের সুযোগে এর বাইরেও কারখানা ছুটির সময় অসংখ্য বাস যাত্রী পরিবহন করেছে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েই। ভাড়াও নিয়েছে অন্যদিনের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ।
একটি বাসে যাত্রী তুলছিলেন হেলপার কামাল। যাত্রীদের উদ্দেশে হাঁক ছাড়ছিলেন ‘আগ্রাবাদ বিশ টাকা, আগ্রাবাদ বিশ টাকা’ করে। হেলপার কামাল বলেন, আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিক টানার ভাড়া নেই। লকডাউনে বাসায় বসে থাকলে উপোস থাকতে হবে। তাই ওস্তাদের (চালক) কথায় গাড়ি নিয়ে এসেছি। সকালে ছয়শ টাকা ভাড়া পেয়েছি, গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে চারটায়। এখান থেকে এখনো ছাড়তে পারিনি। আগ্রাবাদ পর্যন্ত দুই ট্রিপ আপডাউন করতে পারলে হাজার বার’শটাকা পাবো। এতে কোন রকমে খাবারের টাকা হলেও হবে।’ এ বাসশ্রমিক বলেন, ‘প্রথম লকডাউনে কিছু সহযোগিতা পাওয়া গেলেও পুরোটা বছর কোন সহায়তা পাইনি। এখন বাস চালানো বন্ধ থাকলে না খেয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।’
এসময় সমর বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ইপিজেডে একটি ব্যক্তিগত কাজ ছিল। আমার বাসা চান্দগাঁওয়ে। দুপুরে আসতে বাইকে আড়াইশ টাকা খরচ হয়েছে। কাজ সেড়ে সাড়ে তিনটায় এসে বহদ্দারহাট যাওয়ার জন্য সরাসরি বাস পাচ্ছিলাম না। বাইক রাইডাররাও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে। এখন আগ্রাবাদ পর্যন্ত ২০টাকায় উঠেছি। আগ্রাবাদ থেকে রিকশা কিংবা বাইক নিয়ে যাবো।’
এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনা ভাইরাসের ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর ছড়িয়ে পড়া রোধে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু রপ্তানিযোগ্য পোষাক কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে শিথিলতা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোর নির্দেশনা ছিল মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের। লকডাউনের আগের দিন নগরজুড়ে ব্যাপক মাইকিং করে সেনাবাহিনীসহ প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবহনের সুযোগে সাধারণ অসংখ্য বাস চলাচল করেছে। বেশিরভাগ যানবাহনে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয়নি। প্রতি সিটে যাত্রী নিয়েছে বাসগুলো। কোন কোন ক্ষেত্রে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করেছে এসব বাস। স্থানীয়দের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম ইপিজেডে গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবহন করেছে অন্তত চার শতাধিক বাস। তবে ইপিজেডের কিছু প্রতিষ্ঠিত কারখানার অল্প সংখ্যক বাসে দুই সিটে একজন করে যাত্রী পরিবহন করার বিষয়টিও চোখে পড়েছে।