ইনভেন্ট্রির পর নিলামে যেতে ৬ মাস লাগল কেন?

চট্টগ্রাম কাস্টমস ।। খালাস না করা ২৮ টন মহিষের মাংস দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে, অভিযোগ বিডারদের

জাহেদুল কবির | সোমবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি নিলামের স্থায়ী আদেশে অখালাসকৃত পচনশীল পণ্য দ্রুত নিলামের ব্যবস্থার কথা বলা হলেও সেটি মানছে না চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্র্তৃপক্ষ। ভারত থেকে আমদানিকৃত ২৭ হাজার ৯৮০ কেজি (প্রায় ২৮ টন) হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানিকারক খালাস না নেওয়ায় নিলামের তালিকাভুক্ত করে গত এপ্রিলে ইনভেন্ট্রি (গণনা) করেন নিলাম শাখার কর্মকর্তারা। ইনভেন্ট্রির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৪০ ফুট কন্টেনারে ১ হাজার ৬৫৬ কার্টন মহিষের মাংস পাওয়া যায়। এসব কার্টনে উৎপাদনের তারিখ লেখা রয়েছে ২ জানুয়ারি ২০২৩ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা রয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩।

বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারী) বলছেন, আগামীকাল (আজ) অনেকটা তড়িঘড়ি করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হিমায়িত মহিষের মাংসের প্রকাশ্য নিলামের আয়োজন করেছে। বিডারদের অনেকে এসব মাংসের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি কিছু বিডার এসব মাংস সরেজমিনে পরিদর্শন করে দুর্গন্ধ পাওয়ার অভিযোগও তুলেন।

কয়েকজন বিডার অভিযোগ করেন, পণ্যের ইনভেন্ট্রি শেষে ভ্যালুয়েশনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। ভ্যালুয়েশন নেওয়ার পর পণ্যের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণের জন্য মূল্য নির্ধারণ কমিটি নিলামের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করে। পরে পণ্যের ক্যাটালগ প্রকাশ করে নিলাম আয়োজন করে সরকারি নিলামকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে বড় জোর এক মাস লাগতে পারে। পচনশীল পণ্য দ্রুত নিলাম করার কথা বলা থাকলেও এক্ষেত্রে মহিষের মাংস ইনভেন্ট্রি শেষ করার ৬ মাস পর কেন নিলামে তোলা হচ্ছে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

কাস্টমসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর মাসদাইর গাবতলীর মেসার্স এমবি ট্রেডিং চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারত থেকে ৪০ ফুটের শীতাতপ কন্টেনারে প্রায় ২৮টি মহিষের মাংস আমদানি করে। এমভি এইচআর আরাই নামের জাহাজে করে আসা চালানটি আমদানিকারক খালাস না নেওয়ায় ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম কাস্টমস আরএল তালিকায় লিপিবদ্ধ করে। পরে ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের উচ্চমান বহিঃসহকারী এবং নিরাপত্তা প্রতিনিধি মো. নুরুল আফসারের উপস্থিতিতে চালানটির ইনভেন্ট্রি করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা। পণ্যের মোড়কে প্রাপ্ত বর্ণনা অনুযায়ী, পণ্যের মেয়াদ থাকায় চালানটি খালাসযোগ্য এবং ভিতরে কোনো পণ্য পাওয়া গেলে তা আলাদাভাবে শুল্কায়নযোগ্য। আমদানি নীতি আদেশ ২০২১২০২৪ এর প্রযোজ্য শর্ত প্রতিপালন, মামলার তথ্য যাচাই ও অন্যান্য শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে চালানের বিপরীতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে ইনভেন্ট্রির তালিকায় মন্তব্য করেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাকিবুল আলম ও মো. ছামিউল হোসেন ইনভেন্ট্রি তালিকায় স্বাক্ষর করেন।

এদিকে এনবিআর থেকে জারি করা অখালাসকৃত বা চোরাচালানের অভিযোগে আটক ও বাজেয়াপ্তকৃত পণ্যের নিষ্পত্তি পদ্ধতি সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ২০২২ এ বলা হয়েছে, নিষ্পত্তিযোগ্য পচনশীল পণ্য হলে তা দ্রুত নিলামের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য নিলামের আয়োজন করতে হবে। কাস্টম হাউসের ক্ষেত্রে পণ্য গ্রহণের পরপরই কাস্টমস হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিসটেন্ট/ডেপুটি কমিশনারের অনুমতিক্রমে সংশ্লিষ্ট নিলামকারী কর্তৃক প্রকাশ্য নিলামের সময় নির্ধারণ করে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত চতুর্দিকে এবং নিকটবর্তী স্থানে উক্ত পণ্যের বাজার থাকলে সেখানে মাইকিং করে এবং কাস্টম হাউসের নোটিশ বোর্ড এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

পচনশীল পণ্যের নিলামের দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো. আবদুল হান্নান আজাদীকে বলেন, মহিষের মাংসের ইনভেন্ট্রি কখন হয়েছে সেটি কাগজ না দেখলে বলতে পারব না। তবে প্রক্রিয়াগত বিভিন্ন কারণে নিলামের দেরি হতে পারে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমরা সবাই জানি, আমদানিকারক ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য চালান খালাস না নিলে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে নোটিশ করে ১৫ দিন সময় বাড়ানোর বিধান রয়েছে। অন্যথায় পণ্য আমদানির ৪৫ দিন পর সেই চালান নিলামে তোলার কথা। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানছে না। আগামীকাল (আজ) যে মহিষের মাংস প্রকাশ্যে নিলামে তোলা হচ্ছে, সেই চালানের ইনভেন্ট্রি করা হয়েছে ৬ মাস আগে। এখন এসব মাংসের মেয়াদ আছে তিন মাসের কম। অথচ ৬ মাস পেরিয়ে গেছে কেবল কাস্টমস কর্র্তৃপক্ষের গাফিলতিতে। আমরা আজ (গতকাল) মহিষের মাংসের কন্টেনার পরিদর্শনে দেখেছি, এসব মাংস থেকে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। ৬ মাস আগে নিলাম হলে যে দাম পাওয়া যেত, আমি নিশ্চিত এখন সে দাম পাওয়া যাবে না। পচনশীল পণ্য দ্রুত নিলাম আয়োজনে এনবিআরের স্থায়ী আদেশে বলা আছে।

উল্লেখ্য, আজ সকাল সাড়ে ১১টায় প্রায় ২৮ টন হিমায়িত মাংস প্রকাশ্যে তোলার সময়সীমা নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব মাংসের সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৩ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসামাজিক অস্থিরতাই কি দায়ী?
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে বাসের বেপরোয়া গতি কেড়ে নিল দুই প্রাণ