ইনফেকশনের কারণে বাড়ে ঝুঁকি হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ

অগ্নিদগ্ধদের দেখতে চট্টগ্রামে ডা. সামন্ত লাল ।। বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল চট্টগ্রামে হবেই

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ জুন, ২০২২ at ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

‘আগুনে পোড়া রোগীদের সবচেয়ে একটি কারণেই মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। সেটি হল- ইনফেকশন। ইনফেকশনের কারণেই ছোট বার্নও অনেক বড় হয়ে যায়। এতে করে দগ্ধ রোগী মারা যায়। তাই হাসপাতালে ভিড় না করতে সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন সারাদেশের বার্ন চিকিৎসায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন।

ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে চিকিৎসকের তিন সদস্যের একটি টিম সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনারে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ও দগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে আসেন গতকাল। রোগীদের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনের পর হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে মানুষকে হাসপাতালে ভিড় না করতে এ অনুরোধ জানান ডা. সামন্ত লাল সেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর সামিউল ইসলাম, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান, চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, বিএমএ সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ শরীফ, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেদায়েত আলী খান, সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম, চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অংসুই প্রু মারমা, সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত, চমেক বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য চিকিৎসক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাঝে তিনজনের অবস্থা ‘ভালো নয়’ জানিয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমরা রোগীদের দেখেছি। এদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া উচিত। যদি তাদের স্বজনরা রাজি হয়। কারণ, তাদের বার্ন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দরকার। এখানে (চট্টগ্রামে) বার্ন আইসিইউ আলাদা নেই। চিকিৎসা ঠিকই আছে। কিন্তু বেশ কিছু সুবিধা এখানে নেই।

১০ শতাংশ পুড়ে গেলেও ঝুঁকি থাকে উল্লেখ করে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, যদি শ্বাস নালী পুড়ে যায়, তবে ঝুঁকিটা বেশি। আইসোলেশনের মাধ্যমে (আলাদা রেখে) এদের চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু এখানে তা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকায় নিয়ে যাওয়া উচিত এমন তিন রোগীর বিষয়ে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনজনের মধ্যে একজনের ২৫ শতাংশ, বাকি দুইজনের ২০ ও ১৫ শতাংশের মত পুড়ে গেছে। তাদের সকলের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভর্তি থাকা অন্য রোগীদের শরীরের ৩ থেকে ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলেও জানান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ।

ডিপোতে বিস্ফোরণের পর রাসায়নিকের ধোঁয়ায় যাদের চোখে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাদের চোখের চিকিৎসকের মাধ্যমে ‘ফলোআপ’ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, অনেকে তাকাতে পারছেন না। তবে রোগীদের মূলত ধোঁয়ার কারণে শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের দগ্ধদের মধ্যে ১৬ জনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সামন্ত লাল জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই তিনি চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই চট্টগ্রামে এসেছেন। তিনি বলেন, আহত ও দগ্ধদের ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান করতেই এখানে আসা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বার্ন রোগীর চিকিৎসায় যেন কোনো অবহেলা না হয়।
হঠাৎ করে এত দগ্ধ রোগীর কারণে চাপ বাড়লেও চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা সেবার কোনো ঘাটতি হচ্ছে না বলে মনে করেন সামন্ত লাল সেন। তবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার দরকার হত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল স্থাপনে জায়গা নিয়ে জটিলতা রয়ে গেছে জানিয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সর্বশেষ হাসপাতালের পক্ষ থেকে চারটি জায়গার প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় সিরিয়ালে থাকা জায়গার প্রস্তাবটি চাইনিজরা প্রাথমিকভাবে পছন্দ করেছে। তারা আসবে, জায়গাটি দেখবে। বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল চট্টগ্রামে হবেই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এটির জন্য যা যা করতে হয়, এর সবই করা হবে।

ঘটনার পরপর চট্টগ্রামের চিকিৎসক থেকে শুরু করে সকল স্বাস্থ্যকর্মী যেভাবে রোগীদের সেবায় আন্তরিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার মন্তব্য করে হাসপাতাল প্রশাসন, চিকিৎসক-নার্স ও সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমি বলবো এখানে আমাদের নেতা কর্মীরা যাতে অহেতুক ভীড় না করেন। চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানে কোনো রকম যাতে অসুবিধা না হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে তিন সদস্যের একটি টিম এখানে এসেছেন। যদি এখানে কোনো রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। তাহলে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা রোগী সেখানে নিয়ে যাবেন। আমি যে কথাটি বলতে চাই, দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর পরে চট্টগ্রামের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যরা রাত জেগে যেভাবে মানুষকে হাসপাতালে এসে সহায়তা প্রদান করেছেন এটি একটি অভূতপূর্ব বলে আমি মনে করি। ব্রিফিং শেষে সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে বার্ন হাসপাতালের জন্য গোঁয়াছি বাগান এলাকায় নতুন করে প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন ডা. সামন্ত লাল সেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুমুদীনি অয়েল মিলসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধখেলাপিদের ছাড় দিতে ইসির প্রস্তাবে আপত্তি ব্যাংক ও সেবা সংস্থার