ইতিহাস সৃষ্টি করে নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি

বিজয় ভাষণে বললেন, এই জয় দেখাল ট্রাম্পকে হারানোর পথ

| বৃহস্পতিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। তিনি হলেন এই শহরের ১১১তম মেয়র। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মুসলমান ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নেতা নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচিত হলো। গত ১০০ বছরের মধ্যে নিউ ইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হলেন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি।

সর্বশেষ হিসাবে ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন জোহরান মামদানি। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৫১। মামদানির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো পেয়েছেন ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯৫। ৭ দশমিক ১ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৭ ভোট। নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়াতে একই দিনে গভর্নর নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও ডেমোক্র্যাটরা তুলনামূলক সহজ জয় পেয়েছে। নিউ জার্সির ফলাফল বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প শ্রমজীবী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট টানতে পারলেও গভর্নর নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পক্ষে সেই সমর্থন জোটেনি।

নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণে মামদানি বলেছেন, নিউ ইয়র্কের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে, সামথ্যের মধ্যে থাকা একটি শহরের পক্ষে রায় দিয়েছে। বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক রাজবংশকে উৎখাত করেছি। নিউইয়র্ক শহরের নতুন জন্ম হয়েছে।

বিজয় ভাষণে মামদানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকেও তোপ দেগেছেন। বলেছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেহেতু আমি জানি আপনি দেখছেন, আপনার জন্য চারটি শব্দ আছে আমার: টার্ন দ্য ভলিউম আপ (আওয়াজ বাড়ান)। আমাদের কাউকে ধরতে চাইলে, আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ট্রাম্পের হাতে প্রতারিত দেশে তাকে হারানোর পথ যদি কেউ দেখাতে পারে, সে হল এই শহর, যে তাকে বড় করেছে। আমি দুর্নীতির সেই সংস্কৃতির অবসান ঘটাবো যা ট্রাম্পের মতো ধনীদের কর ফাঁকি ও কর ছাড়ের সুযোগ কাজে লাগানোর উপায় করে দেয়।’

মামদানি ভাষণে তার বাবামাকে ধন্যবাদ জানান এবং নিজের মুসলিম পরিচয়কে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। বলেন, ‘মা, বাবা, আমি তোমাদের সন্তান হতে পেরে গর্বিত। আমি তরুণ, এবং আমি মুসলিম।’

বিবিসি লিখেছে, গত বছর যখন তিনি মেয়র পদে প্রার্থী হলেন, তখন খুব কম লোকই তাকে চিনত। তার তহবিল ছিল যৎসামান্য, রাজনৈতিক দলের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তাও তিনি পাননি। তারপরও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার মত প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে তার এই বিজয় এক অনন্য ঘটনা।

তবে তার সাফল্যের তাৎপর্য এখানেই শেষ নয়। তিনি সেই ধরনের রাজনীতিবিদ, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির বামপন্থি অংশ বহুদিন ধরে খুঁজে আসছে। তিনি কম বয়সী, ক্যারিশমাটিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পারদর্শী এবং জাতিগত পরিচয়ে তিনি বৈচিত্র্যের প্রতিচ্ছবি। বিনামূল্যে শিশু পরিচর্যা, গণপরিবহন সমপ্রসারণ এবং বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপের মত বামপন্থি নীতিগুলোর পক্ষে সরব মামদানি শ্রমজীবী শ্রেণির অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো নিয়েও সরাসরি কথা বলেছেন, যে শ্রেণির অনেকেই সমপ্রতি ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে সরে গেছে।

সাবেক গভর্নর কুমোকে হারিয়ে মামদানি শুধু একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে পরাজিত করেননি, বরং ডেমোক্রেটিক পার্টির ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বের ওপরও আঘাত হেনেছেন, যাদের অনেকেই বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে করে তরুণ প্রজন্ম। এ কারণেই মামদানির নির্বাচনি প্রচার জাতীয় পর্যায়ে বিপুল মনোযোগ কাড়ে, যা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শহরের মেয়র নির্বাচনের জন্য বিরল। খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমেরিকার রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানের কোয়েপাড়ায় বিএনপির দুই গ্রুপে গোলাগুলি, আহত ৪