মানুষের প্রতি সুগভীর ভালোবাসা ও বিশ্বাসের জোরেই টুঙ্গীপাড়ার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। বিশ্বের মানচিত্রে খোদাই করতে পেরেছিলেন একটি নতুন দেশের নাম। কিন্তু মানুষের প্রতি সেই সুতীব্র বিশ্বাসের মধ্যেই ছিল ট্র্যাজেডির বীজ। তিনি ভাবতেই পারেননি তাঁর প্রিয় দেশবাসীর মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে ঘাতক। ব্রুটাসের দল। পাকিস্তানপন্থী মুসলিম লীগ শাসনে সুবিধাভোগী পরিবারগুলির সক্রিয়তা তাঁর অজানা ছিল না।
তবুও দেশবাসীর প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাসে ব্যক্তিগত সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থাই তিনি রাখেননি। আসলে সুরক্ষার বর্মে আবদ্ধ করে সাধারণ মানুষের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার কথা তাঁর পক্ষে ভাবা সম্ভবই ছিল না। সেই ছিদ্রপথেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ৩২ নং ধানমণ্ডির বাড়িতে মধ্যরাতে প্রবেশ করল স্বার্থপর ষড়যন্ত্রী ঘাতকের দল। নৃশংসভাবে হত্যা করল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বহুজনকে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের প্রশ্নের উত্তরে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন যে তাঁর বড় গুণ হল তিনি তাঁর দেশবাসীকে ভালোবাসেন আর তাঁর দোষ হল তিনি তাঁদের বড় বেশি ভালোবাসেন ‘I love them too much’ নিজের জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার দাম দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে প্রাণে মারতে পারলেও ষড়যন্ত্রীদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। মুজিবের শেকড় এমন গভীরে ইতিহাস থেকে কখনো তাঁকে উপড়ে ফেলা যাবে না। মুজিব বাঙালির হৃদ স্পন্দন। ইতিহাসের পাতায় মুজিব আছে এবং থাকবে। জীবিত মুজিবের থেকেও আরও শক্তিশালী মৃত মুজিব। কোটি বাঙালির হৃদয়ে স্থাপিত তাঁর চিরস্থায়ী আসন-যত কাল রবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান/ ততক্ষণ রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান।