ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৭ জুন, ২০২৪ at ১২:১৭ অপরাহ্ণ

দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকার পর ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফিরেই দুর্দান্ত প্রোটিয়ারা। পৌছে যান সেবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।

কিন্তু বৃষ্টি আইনে সেবার ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এরপর আরো তিনবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলেছে প্রোটিয়ারা। ১৯৯৯, ২০১৫ এবং ২০২৩ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালে যেতে পারেনি। বরাবরই ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০০৯ এবং ২০১৪ আসরে সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালে যেতে পারেনি একবারও। তাই তাদের নামের সাথে চোকার শব্দটা জুড়ে যায় ক্রিকেট বিশ্বে।

বরাবরই শক্তিশালী দল নিয়ে ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে হাজির হয় দক্ষিন আফ্রিকা। কিন্তু তাদের দৌড় থেমে যায় সেমিফাইনালে গিয়ে। ফাইনালের একেবারে কাছে গিয়ে বারবার ফিরেছে খালি হাতে। তবে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্টিত মিনি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল প্রোটিয়ারা ।

সেটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের একমাত্র অর্জন। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগে প্রোটিয়া কোচ বলেছিলেন নিজেদের গা থেকে চোকার শব্দটা বাদ দেওয়ার সময় এসেছে। এখন তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। নতুন আশায় বুক বাধছেন। নতুন যাত্রার পরিকল্পনা করছেন।

শেষ পর্যন্ত তাতে সফল হলো দক্ষিন আফ্রিকা। ১৯৯২ সাল থেকে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি মিলিয় সবকটি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দক্ষিন আফ্রিকা প্রথমবারের মত চোকার অপবাদ ঝেড়ে ফেলে জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে। যুগে যুগে হ্যানসি ক্রনিয়ে, গ্যারি কারেস্টেন, জ্যাক ক্যালিস, শন পোলক, ল্যান্স ক্লুজনার, এলান ডোনাল্ডরা যা পারেনি সেটা করে দেখালেন এইডেন মার্করাম, কুইন্টন ডি কক, রাবাদা, শামসি, জেনসেন, মহারাজরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বারের ফাইনালে দক্ষিন আফ্রিকা।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিহাস সৃষ্টি করা আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মত ফাইনালে পৌছার স্বাদ পুরন করল প্রোটিয়ারা। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মত দলকে হারিয়ে যারা চমক সৃষ্টি করেছিল সে আফগানিস্তানকে মাটিতে নামিয়ে আনল দক্ষিন আফ্রিকা। বলা যায় সেমিফাইনালে একেবারে খড় খুটোর মত উড়ে গেল আফগানিস্তান। দক্ষিন আফ্রিকার পেস ইউনিটের তিন সদস্য মারকো জেনসেন, কাগিসু রাবাদা এবং এনরিক নরকীয়ার আগুনে পুড়ে ছারখার আফগান ব্যাটিং। এরপর স্পিনের বড় তারকা তাবারেজ শামসি ছেটে দিলেন আফগানদের টেল এন্ডার।

আর তাতেই প্রথমার্ধেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আফগানরা। শেষ পর্যন্ত তাদের হার মানতে হয় ৯ উইকেটে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচাইতে কম দীর্ঘ এবং একতরফা সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে দক্ষিন আফ্রিকা। দুই ইনিংস মিলিয়ে এই ম্যাচে খেলা হয়েছে ২০ ওভার ৪ বল। রশিদ, নবী, ফারুকি, জাদরান, গুরবাজদের স্বপ্নকে গুড়িয়ে দিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পুরন করল দক্ষিন আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। আফগানিস্তানের স্বপ্ন দৌড় থেমে গেল সেমিফাইনালে এসে। দক্ষি আফ্রিকা সৃষ্টি করল নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের ফাইনালে আসা দক্ষিন আফ্রিকা এবার স্বপ্ন দেখতেই পারে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জেতারও।

ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তান শুরু থেকেই বিপর্যয়ে। প্রথম ওভারেই ভাঙ্গে আফগানদের প্রধান ভরসা উদ্বোধনী জুটি। তিন ম্যাচে শতরানের এবং আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৯ রানের জুটি গড়া রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান বিচ্ছিন্ন হন মাত্র ৪ রানে। গুরবাজকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন জেনসেন।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে গুলবাদিন নাইবের স্টাম্প উড়িয়ে দেন জেনসেন। পরের ওভারে রাবাদার আঘাত। তিনি ফেরালেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে। তিন বল পর মোহাম্মদ নবীকে ফিরিয়ে আফগানদের ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন রাবাদা। ২৩ রানের মাথায় খারোতিকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন জেনসেন। আফগানিস্তানের সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচাইতে কম রানে অল আউট হওয়ার শংকা। ইনিংসের শুরু থেকে দক্ষিন আফ্রিকার পেসাররা আগুন ঝরালেও দশম ওভারে বল করতে এসে নিজের ঘুর্ণি ভেল্কি দেখাতে শুরু করেন তাবারেজ শামসি। তিনি একে একে তুলে নেন করিম জানাত, নুর আহমেদ এবং নাবিন উল হকককে।

আর তাতেই মাত্র ১১.৫ ওভারে ৫৬ রানে অল আউট হয় আফগানিস্তান। দলের পক্ষে আজমতউল্লাহ উমরজাই কেবল ১০ রান করে দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানদের এটি সর্বনিন্ম দলীয় স্কোর। এর আগে ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭২ রানে অল আউট হয়েছিল আফগানিস্তান। দক্ষিন আফ্রিকার পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়ে আফগানদের ধ্বসিয়ে দিয়েছে মারকো জেনসেন এবং তাবারেজ শামসি। শুরুতে ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন জেনসেন। আর শেষে মাত্র ৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন শামসি। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রাবাদা এবং নরকিয়া।

মাত্র ৫৭ রানের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় দক্ষিন আফ্রিকা। ফজল হক ফারুকিকে চার মেরে বোল্ড হয়ে ফিরেন কুইন্ট ডি কক। এরপর অবশ্য আফগান বোলারদের আর কোন সুযোগ দেননি দক্ষিন আফ্রিকার দুই ব্যাটার রিজা হেনরিক এবং অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। দুজন মিলে মাত্র ৮.৫ ওভারে দলকে জয়ের বন্দরে এবং ফাইনালে পৌছে দেন। হেনরিক ২৫ বলে ২৯ এবং মার্করাম ২১ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার উঠে বল হাতে আগুন ঝরানো মারকো জেনসেনের হাতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের ১ হাজার ৯৮১ কোটি টাকার বাজেট