ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জেতা হলো না। ফাইনালে পরিণত হওয়া সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটিতে আর পেরে উঠল না টাইগাররা। পাল্লেকেলেতে শেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশকে ৯৯ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। প্রথম ম্যাচে বোলাররা দারুণ করার পরও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হারতে হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং এবং বোলিং দুটোই হয়েছে দারুণ। আর তাতে ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে এসে আবারো ছন্নছাড়া বাংলাদেশ দল। বোলাররা পারেনি কম রানে লঙ্কানদের বেঁধে ফেলতে। আর ব্যাটাররা আরো একবার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় বাংলাদেশ দলের। তাতে টেস্ট সিরিজের পাশাপাশি ওয়ানডে সিরিজেও হারতে হলো টাইগারদের। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি ২–১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা শিবিরে শুরুতেই আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। নিজের দ্বিতীয় এবং ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নিশান মাদুশকার উইকেট তুলে নেন তানজিম। ১ রান করে ফিরেন এই লঙ্কান ওপেনার। তবে আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ৪৭ বলে ৩৫ রান করা নিশাঙ্কাকে থামান আগের ম্যাচের নায়ক তানভীর ইসলাম। তাকে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে পারভেজ হোসেন ইমনের হাতে ক্যাচ দেন নিশাঙ্কা। কুশল মেন্ডিসের সাথে ৫৬ রানের জুটি গড়েন নিশাঙ্কা। কামিন্দু মেন্ডিস এসে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি কুশল মেন্ডিসকে। ২০ বলে ১৬ রান করা কামিন্দু মেন্ডিস এলবিডব্লিউ হন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। ১০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। তবে চতুর্থ উইকেটে চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। ১১৭ বলে ১২৪ রান তোলেন তারা। মেন্ডিস সেঞ্চুরি আর আসালাঙ্কা করেন হাফ সেঞ্চুরি। ইনিংসের ৪১তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। তার লো ফুলটস বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আসালাঙ্কা। ৬৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৫৮ রান।
জানিথ লিয়ানাগে আবারও ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে ১৭ বলে ১২ করেই তাকে দুর্ভাগ্যজনক আউটের শিকার হতে হয়। মিরাজের বলে পেছনে খেলতে গিয়ে পা দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন তিনি। ফিরেন হিট উইকেট হয়ে। পরের ওভারে শ্রীলঙ্কা হারায় তাদের সেঞ্চুরিয়ানকে। শামীম পাটোয়ারীর বলে ফিরেন কুশল মেন্ডিস। শামীম নিজেই দৌঁড়ে গিয়ে বলটি তালুবন্দী করেন ক্যাচটি। তবে ফেরার আগে ১১৪ বলে ১৮টি চারের সাহায্যে কুশলের ইনিংসটি ছিল ১২৪ রানের। শেষদিকে দুশমন্ত চামিরা ৮ বলে ১০ আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১৪ বলে অপরাজিত ১৮ করলে ২৮৫ রানে গিয়ে থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। বাংলাদেশের বোলাররা মাঝের ওভারগুলোতে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি। ফলে তিনশর কাছাকাছি রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ ৫১ রানে আর মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৮ রানে নেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম আর শামীম পাটোয়ারী।
২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আসিথা ফার্নান্ডোর বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন তানজিদ তামিম। ১৩ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ১৭ রান করেন এই ওপেনার। ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত পারলেন না রানের খাতা খুলতে। সামিরার বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন মাত্র ৩ বল খেলে। তৃতীয় উইকেটে পারভেজ হোসেন ইমন এবং তাওহিদ হৃদয় মিলে যোগ করেন ৪২ রান। ৪৪ বলে ২৮ রান করে ফিরেন ইমন। এরপর হৃদয়ের সাথে অধিনায়ক মিরাজ যোগ দিলে রানের চাকা দ্রুত ঘুরতে থাকে। কিন্তু এ দুজন ৪৩ রানের বেশি যোগ করতে পারলেন না। ২৫ বলে ২৮ রান করে ওয়ালেলাগের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন মিরাজ। ইনিংসে ৪টি চার এবং একটি দর্শনীয় ছক্কা মেরেছেন মিরাজ।
এরপর দায়িত্ব নিতে পারলেন না শামীম হোসেনও। অহেতুক হাসারাঙ্গাকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন শামীম। ফিরেন ১৮ বলে ১২ রান করে। তাওহিদ হৃদয়ও শেষ পর্যন্ত দিলেন রণে ভঙ্গ। নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করার পর যেন তার দায়িত্ব শেষ। সামিরার বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৭৮ বলে ৫১ রান করে আসেন হৃদয়। হৃদয়ের বিদায়ে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে অনেকটাই দূরে সরে যায়। আগের ম্যাচে ক্যামিও ইনিংস খেলে শেষ দিকে দলের রান বাড়িয়েছিলেন তানজিম হাসান। তবে এবার চরম প্রয়োজনের সময় পারেননি এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। দুশমান্থ চামিরার অফ স্টাম্পের বাইরের বল থার্ড ম্যানে খেলার চেষ্টায় খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হলেন ৮ বলে ৫ রান করা তানজিম। ক্রিজে নতুন ব্যাটার তাসকিন আহমেদ। তার সাথে জাকের আলি। তাসকিনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আসিথা ফার্নান্দোর স্টাম্পের ওপর করা স্লোয়ার ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড হন ৯ নম্বরে নামা ব্যাটার। ১ রান করেন তাসকিন। জাকের আলির সঙ্গী হতে ক্রিজে আসেন তানভির ইসলাম।
সঙ্গীদের হারিয়ে বেশিক্ষণ একা এগোতে পারলেন না জাকের আলি। আসিথা ফার্নান্দোর বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান বাংলাদেশের এই শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। আসিথার এক বল আগেই ছক্কা মারেন জাকের। আবারও একই শটের পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে স্টাম্প এলোমেলো হতে দেখেন কিপার–ব্যাটার। ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ বলে ২৭ রান করে ফেরেন তিনি। ক্রিজে শেষ দুই ব্যাটার তানভির ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। তানভীর ৮ রান করে হাসারাঙ্গার বলে মাদুশকার হাতে ক্যাচ হয়ে গেলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৯.৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান। শ্রীলঙ্কার ফার্নান্দো এবং চামিরা ৩টি করে আর ওয়ালালাগে এবং হাসারাঙ্গা ২টি করে উইকেট নেন। প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ এবং প্লেয়ার অব দ্যা সিরিজ হন শ্রীলঙ্কার কুসাল মেন্ডিস। দুই দল এখন খেলবে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ। প্রথম ম্যাচ পাল্লেকেলেতেই বৃহস্পতিবার।