লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে ‘চুনতি বড় ও ছোট মিয়াজি জামে মসজিদ’। ইউনিয়নের বড় মিয়াজি পাড়ায় এই মসজিদ ১৬৬৮ সালে স্থাপিত হয়। পরে ১৯৭৭ সালে সংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট পাকা মসজিদে রূপান্তর করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সাল পুরাতন মসজিদ ভবন ভেঙে আধুনিক নির্মাণশৈলীর নয়নাভিরাম দ্বিতল এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা যায়, চুনতির ঐতিহ্যবাহী মিয়াজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল সুফি সাধক খন্দকার নছরুল্লাহ মিয়াজি (রাহ.) খ্রিষ্টীয় ১৬ শতকের শুরুতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তিনি জঙ্গলাকীর্ণ চুনতির উত্তর প্রান্তরে ক্ষুদ্র–ক্ষুদ্র টিলাসমেত একটি পল্লীর গোড়াপত্তন করেন। সেখানে তিনি একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় ছেলে–মেয়েদের শিক্ষা প্রদান করেন। এতে গ্রামবাসীরা তাকে ভক্তিশ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেন। শাহ খন্দকার নছরুল্লাহ মিয়াজির (রাহ.) দুই পুত্র ছিলেন শাহ শরীফ ও শাহ আবু শরীফ। যারা বড় মিয়াজি ও ছোট মিয়াজি নামে পরিচিত ছিলেন। তারা উচ্চ শিক্ষিত আলেম ও কামেল তত্ত্বজ্ঞানী দরবেশ ছিলেন। শাহ খন্দকার নছরুল্লাহ মিয়াজি তার পুত্র বড় মিয়াজি ও ছোট মিয়াজি নামাজ আদায়ের জন্য চুনতির সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্বপ্রথম ‘চুনতি বড় ও ছোট মিয়াজি মসজিদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। চুনতি বড় মিয়াজি পাড়া টিলার উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বড় মিয়াজি ও ছোট মিয়াজি (রাহ.) মসজিদের নামে সাড়ে ৯ কানি জমি ওয়াকফ করেন। বড় ও ছোট মিয়াজি মসজিদ, মসজিদ সংলগ্ন ভিটা, কবরস্থান ও মসজিদ সংলগ্ন টিলা মিলে ৪২ কানি জায়গা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মসজিদে সাত মহল্লার মানুষ নামাজ আদায় করেন। তাদের কবরস্থানও মসজিদের পাশে। মসজিদে একসাথে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের দুই পাশে বড় মিয়াজি ও ছোট মিয়াজির (রাহ.) কবর রয়েছে। মসজিদের ডান পাশে রয়েছে অজুখানা ও শৌচাগার এবং ঈদগাহ ময়দান। মসজিদের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে হেফজখানা, ফোরকানিয়া ও নূরানী মাদ্রাসা। প্রতি রমজানে হেফজখানার ছাত্র ও এলাকাবাসীদের নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মসজিদের ইমাম হাফেজ সাইফুল আলম সোহেল জানান, মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমামতির পাশাপাশি চুনতি বড় ও ছোট মিয়াজি (রাহ.) হেফজখানা, ফোরকানিয়া ও নূরানী মাদ্রাসা দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম এই মসজিদে দায়িত্ব পালন করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন সোহেল।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জান মোহাম্মদ সিকদার জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবত মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মসজিদের জায়গায় বাগান ও মৎস্য খামার থেকে আয় এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ২০১০ সালে মসজিদটি পুণনির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের আয়–ব্যয়ের হিসাবে রয়েছে স্বচ্ছতা। প্রতি সপ্তাহের আয়–ব্যয়ের হিসাব জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হয়। আগামীতে প্রাচীন এই মসজিদের উন্নয়নে আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।