ইতিহাসে দ্রুততম বিচার সাত দিনে রায়

বাগেরহাটে শিশু ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন

| মঙ্গলবার , ২০ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলার ইতিহাসে দ্রুততম বিচারে শিশু ধর্ষণের দায়ে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বাগেরহাটের একটি আদালত। বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম গতকাল সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার একমাত্র আসামি আব্দুল মান্নান সরদার (৫০) বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয় প্রকল্প এলাকায় প্রয়াত আহম্মদ সরদারের ছেলে। তার উপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেন বিচারক। তিনি বলেন, অভিযোগ ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০০ সালের নারী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল। খবর বিডিনিউজের।
আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৩ অক্টোবর মামলা হওয়ার পর ১২ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। তার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় গতকাল রায় ঘোষণা করল আদালত। ধর্ষণের ঘটনার ১৬ দিনের মাথায় বিচার পেল শিশুটি। বাংলাদেশে এত অল্প সময়ে আর কোনো ফৌজদারি মামলার বিচার শেষ হওয়ার নজির নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি রনজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, কোনো ধর্ষণের ঘটনায় আসামি সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়লে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাগেরহাটের আদালত একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা আদালতে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। আদালত শাস্তি দিয়েছে। এই রায়ে আমরা খুশি। অন্যদিকে আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী লিয়াকত আলী বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহে আদালত এই মামলার বিচার করেছে। আরও একটু সময় পেলে আমরা হয়ত আসামিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারতাম। তড়িৎ বিচারে আমরা আশানুরূপ ফল পাইনি। এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। উচ্চ আদালতে আমরা ন্যয়বিচার পাব বলে আশা করি।

১২ অক্টোবর যেদিন এ মামলার অভিযোগ গঠন হয়, তখনও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তার পরদিনই আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার ভূমিহীন আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার নিপীড়িত শিশুটির বাবা নেই। সেখানে সে তার মামার কাছে থেকে বড় হচ্ছে। গত ৩ অক্টোবর বিকালে প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান সরদার বিস্কুট দেওয়ার কথা বলে নিজের ঘরে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। মেয়েটির মামা ওই রাতেই মোংলা থানায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার এসআই বিশ্বজিত মুখার্জ্জী ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরদিন আদালত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় এবং ১৩ অক্টোবর বাদীপক্ষের ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১৪ অক্টোবর চিকিৎসক, বিচারিক হাকিম, নারী পুলিশ সদস্য এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই সাক্ষ্য নেওয়া হয় ১৫ অক্টোবর। এরপর রোববার বাদী ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক গতকাল আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করলেন। এদিকে এ মামলার রায় ঘিরে স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনের কর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এদিন আদালতে ভিড় করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেয়ার চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ১১ ইউনিয়নে নির্বাচন আজ