ইতিকাফ : আল্লাহপাকের অনুগ্রহসিক্ত হওয়ার বড় সুযোগ

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | বুধবার , ১৯ মার্চ, ২০২৫ at ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ

ইসলামে বৈরাগ্যবাদ বা সন্ন্যাসব্রত বলতে কিছু নেই। মহান আল্লাহপাকের সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি অর্জনে বন জঙ্গলে পাহাড়ে পর্বতে যেতে হবেএমনটা ভাববার অবকাশও নেই। বরং মহান আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টির জন্য কিছু ইবাদত বন্দেগি নির্দিষ্ট রয়েছে। তেমনি ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হলো রমজানে মসজিদে ইতিকাফ করা। মাহে রমজানের শেষ দশ দিনে পাড়া বা মহল্লাবাসীর পক্ষে যেকোনো একজন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়াহ। মাহে রমজানের শেষ দশকে প্রতিটি জুমা মসজিদে কমপক্ষে একজন ইতিকাফ করলে পাড়া মহাল্লাবাসী সবার পক্ষ হতে ইতিকাফ আদায় হবে। জুমা মসজিদে ইতিকাফ পালন উত্তম, কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আজান ও ইকামতসহ জামাতের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদেও ইতিকাফ করা যাবে। ইতিকাফ মানে হলো অবস্থান করা। আরবি ‘আকফ’ শব্দটি থেকে ইতিকাফ এসেছে। কোনো বস্তুকে বাধ্যতামূলকভাবে ধারণ করা কিংবা কোনো বস্তুর ওপর নিজেকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখার নাম ‘ইতিকাফ’। আল্লামা শামী (রহ.) মহিলাদেরকে নিজ নিজ ঘরে নামাজের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে অভিহিত করেছেন। ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগেই মসজিদে মসজিদে ইতিকাফ পালনের জন্য ছুটে যেতে হয়। ইতিকাফের মূল লক্ষ্যউদ্দেশ্যই হলো লাইলাতুল কদর বা শবে কদর তালাশ করা। রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করতে বলেছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইতিকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্থিব সবকিছু থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহ পাকের ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া। ইতিকাফের বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে পাকে রয়েছে,রাসূলে পাক (.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তার মাঝে ও জাহান্নামের আগুনের মাঝে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন, যা পূর্বপশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব।’ (আল বায়হাকি, আহমাদ ইবনিল হোসাইন, শুয়াবুল ঈমান, ৫ খণ্ড, ৪৩৬ পৃষ্ঠা)। এ বর্ণনা অনুযায়ী ইতিকাফ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের মোক্ষম মাধ্যম। ওফাতের বছরে প্রিয় নবী (.) রোজার মাসে শেষ বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। প্রিয় নবীর (.) ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তাঁর সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত যে, রাসূলে পাক (.) রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই অব্যাহত ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফের সময় প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। এমনকি মসজিদ থেকে বের হয়ে জানাজার নামাজ পড়াও শরিয়তে নিষেধ। অজুগোসলের জন্য কিংবা খানাপিনা আনার জন্য প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে। মহিলারা স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা সমীচীন নয়। তবে স্বামীদের কর্তব্য হলো নিজ নিজ স্ত্রীকে জীবনে অন্তত একবার হলেও ইতিকাফের জন্য অনুপ্রাণিত করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের চার উপজেলা এখনো স্মার্ট কার্ড পাননি ১১ লাখ ভোটার
পরবর্তী নিবন্ধডিবি পরিচয়ে অপহৃত দুই যুবক উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২