রেলের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে কন্টেইনার ট্রেনে বন্দরের পণ্য পরিবহন, বিপিসির জ্বালানি তেল, সরকারি ও ব্যবসায়ীদের খাদ্যশস্য, সারসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটে রেলের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান এ মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা দিনদিন কমছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের দুই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানিক ব্যবসায়ীদের পণ্য ও বিপিসির জ্বালানি তেলসহ মালবাহী ট্রেনের মাধ্যমে সারাদেশে পণ্য পরিবহন করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে আসছে। মালবাহী ট্রেনে খরচ একেবারেই কম কিন্তু আয় বেশি। অন্যদিকে যাত্রীবাহী ট্রেনে খরচ অনেক বেশি। একটি মালবাহী ট্রেনে শুধুমমাত্র একজন লোকোমাস্টার, একজন সহকারী লোকোমাস্টার এবং ৮–১০ জনের একটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হলেই চলে। আর কোনো স্টাফ লাগে না। যার কারণে ব্যয় একেবারেই কম। কিন্তু যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, গার্ড, টিটিই, জিআরপি পুলিশ, আরএনবি, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির কর্মচারী লাগে। যার কারণে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে খরচ অনেক বেশি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) এর দপ্তর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড থেকে জ্বালানি তেল, পাথর, খাদ্যশস্য ও শিল্প কাঁচামাল পরিবহনের জন্য ১৫টি লোকোমোটিভ প্রয়োজন হলেও মাত্র ৭টি ইঞ্জিন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। কন্টেইনার ট্রেনের জন্য ৭টি ইঞ্জিন দরকার থাকলেও মাত্র দুটি ইঞ্জিন চালু রয়েছে, ফলে পণ্য পরিবহন অর্ধেকে নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের (সিজিপিওয়াই) দায়িত্বরত রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এনামুল হক সিকদার বলেন, পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন সংকট (লোকোমোটিভ) প্রকট। প্রতিদিন অনেক চাহিদা। কিন্তু আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩টা, ৪টা, ৫টার বেশি ইঞ্জিন পাই না।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টের দপ্তর থেকে রেলের রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাব্য উপায় তুলে ধরে রেল ভবনে এক প্রতিবেদনে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ টিকিট বিক্রি করে। তবে অনলাইন টিকিটিং সার্ভারের ট্র্যাফিক বিশ্লেণ অনুযায়ী প্রকৃত চাহিদা কমপক্ষে ২০ লাখ।
রেলওয়ের সক্ষমতা দ্বিগুণ করতে প্রতিদিন ৪ লাখ টিকিট বিক্রির লক্ষ্যে অতিরিক্ত ১৩০০ কোচ, ২০০ লোকোমোটিভ এবং ১৫০০ কর্মী প্রয়োজন হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে রেলওয়ের বার্ষিক রাজস্ব ৩৬৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর কোচ সংখ্যা ১৪ থেকে ১৮–তে উন্নীত করা, যা ২৫% রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারে। প্রতিবেদনে রেলওয়ে মালবাহী পরিবহনের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির বড় সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেশিরভাগ কনটেইনার সড়কপথে আনা–নেওয়া করা হয়। ৩ থেকে ৪ শতাংশ কনটেইনার আনা–নেওয়া হয় রেল ও নৌপথে। ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে ট্রেনের মাধ্যমে কনটেইনারবাহী পণ্য আনা–নেওয়া হয়। এর বাইরে সিলেট, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলের মাধ্যমে পরিবহন করা হয় পণ্যবাহী কনটেইনার।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মোট কন্টেইনার পরিবহনের মাত্র ২% বর্তমানে রেলপথে হয়, যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ হার ২৫%-এ উন্নীত করতে চায়। তবে কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোর (আইসিডি) বিদ্যমান সক্ষমতা দিয়ে এটি সম্ভব নয়।
বর্ধিত চাহিদা সামাল দিতে ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া ৪০টি নতুন মিটারগেজ লোকোমোটিভ ও ৪৫০ জন অতিরিক্ত কর্মী গার্ড, লোকোমোটিভ মাস্টার, সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বছরে ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আসতে পারে।