ইঞ্জিন সংকটে ভুগছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল

দরকার ৭২টি মিলছে ৫৩টি । মাঝপথে ইঞ্জিন বিকলে ঘটছে শিডিউল বিপর্যয় ও যাত্রা বাতিলের ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মাঝপথে যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং যা দিনদিন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার জন্য ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা এবং ট্রেনের যাত্রাও বাতিল হচ্ছে। এছাড়া ইঞ্জিন সংকটে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বারবার যাত্রীবাহী ট্রেনের ‘যাত্রা বাতিল’ হচ্ছে। এর ফলে মাঝপথে শত শত ট্রেনযাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

রেলওয়ের পরিবহন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারাত্মক ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) সংকটে ভুগছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। পূর্বাঞ্চলে যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ৭২টি ইঞ্জিন, কিন্তু কার্যত মিলছে মাত্র ৫৩টি। ফলে একদিকে বিশ্রাম ও রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ না পেয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ইঞ্জিনগুলো। যার কারণে মাঝপথে যাত্রীসহ ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে। মাঝপথে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপশি যাত্রা বাতিলের ঘটনাও ঘটছে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। অন্যদিকে প্রতিটি ট্রেন ছাড়ছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে।

গত এক মাসে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১০ থেকে ১২টি যাত্রীবাহী ট্রেনের মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছে বলে জানান বেশ কয়েকজন ট্রেন চালক। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের আরএনবির এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে জানান, ইঞ্জিন সংকটে ট্রেনের যাত্রা বাতিলের কারণে প্রায় সময় যাত্রীরা স্টেশনে বিক্ষোভ করেন। কিছুক্ষণ আগে কক্সবাজার থেকেও একটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। প্রায় সময় মাঝপথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত ১৮ জুন পাহাড়তলী স্টেশনে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। বিকল্প ইঞ্জিন না থাকায় পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে মেকানিক এনে ইঞ্জিনটি ঠিক করা হয়।

গত ১৮ জুন তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ফৌজদারহাট যাওয়ার পর ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। পরে রিলিফ ইঞ্জিন গিয়ে ট্রেনটিকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব করে। ১৮ জুন ঢাকাগামী গোধূলি এক্সপ্রেস ট্রেন হাসানপুর স্টেশনে গিয়ে ইঞ্জিন বিকল হয়। ১৯ জুন ঢাকাকক্সবাজার রুটের পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন মন্দবাগ স্টেশনে যাওয়ার পর বিকল হয়। ১৯ জুন কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। ২২ জুন পর্যটক ট্রেনের ইঞ্জিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে নষ্ট হয়ে যায়। ২২ জুন প্রবাল ও সৈকত ইঞ্জিনের ওয়াটার লিকেজজনিত কারণে ট্রেন দুটির যাত্রা বাতিল করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্টেশন মাস্টার আজাদীকে বলেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে চট্টগ্রামসিলেট ও চট্টগ্রামজামালপুর রুটে ট্রেন ছাড়তে প্রায় সময়ই বিলম্ব হয়। এতে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি কন্টেনার ও তেলবাহী ট্রেন চলাচলেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। প্রতিদিন যেখানে ১৩টি ইঞ্জিন দরকার, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৫টি। প্রতিদিন ২৭২৮টি ইঞ্জিনের ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ না হওয়ায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের সরঞ্জাম সময়মতো না আসায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

ইঞ্জিন সংকটের ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুবক্তগীন বলেন, নতুন করে ইঞ্জিন আমদানির একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরনো ইঞ্জিনের মাধ্যমে ট্রেন সেবা চালানোর কারণে সংকট বেড়ে গেছে। তাছাড়া নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ, নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর ফলেও ইঞ্জিনের ওপর চাপ বেড়েছে। তিনি জানান, নতুন ইঞ্জিন আমদানি কার্যক্রম শুরু হলে রেলের লোকোমোটিভ সংকট কমে সেবার মান আরো বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেবল যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর অর্থনীতি হতে পারে না : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধগুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয় : প্রধান উপদেষ্টা