ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে গতকাল থেকে বন্ধ করে দেয়া হলো চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটের স্পেশাল ট্রেনটি। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। এই সমালোচনার মুখে রেল কর্তৃপক্ষ গতকাল রাতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ১২ জুন থেকে ট্রেনটি আবার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পর এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে দেশের সবচেয়ে লাভজনক রুটে পরিণত হয়। রেলভবনের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন সারাদেশ থেকে কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য রেলওয়ের ওয়েবসাইটে টিকিটের জন্য একলাখ যাত্রী ক্লিক (ভিজিট করে) করে থাকেন।
রেলওয়ের যাত্রী সাধারণ এবং অর্থনীতিবিদদের মতে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রেলপথ দিয়ে (ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার) এখন চাহিদা মতো ট্রেন চালিয়ে রেলওয়ের রাজস্ব আয়ের সময়। রাজস্ব আয়ের এই সময়ে নতুন এই রুটে ট্রেন চালু করতে নানা গড়িমসি করছেন রেলওয়ের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা। রেলওয়ে এই রুটে যাত্রীদের চাহিদা মতো ট্রেন না দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গুরুত্বহীন রুটে (যে রুটে যাত্রী নেই) নতুন নতুন ট্রেন চালু করা হচ্ছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) দপ্তর থেকে সম্প্রতি রেল ভবনে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘গত ঈদুল ফিতরে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে চালু হওয়া ‘স্পেশাল ট্রেনটি ’ থেকে গত ৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত মোট ২৫ দিন (৩দিন চলাচল বন্ধ ছিল) ৫১ লাখ ২৫ হাজার ৩৬২ টাকার রাজস্ব আয় করেছে। ওই চিঠিতে ট্রেনটি ১০ বগির স্থলে ১৮ বগিতে নিয়মিত চালু রাখলে এই রুটের যাত্রী চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রেলওয়ের ভাবমূর্তি ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
ডিআরএমএর দপ্তর থেকে গত ৯ মে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটের স্পেশাল ট্রেনটি ১০ বগির স্থলে ১৮ বগিতে নিয়মিত চালুর প্রস্তাবের ২০ দিনের মাথায় ট্রেনটি ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে গত ২৮ মে। এই নির্দেশনার আলোকে গতকাল (৩০ মে ) থেকে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটের ‘স্পেশাল ট্রেনটি’।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটের স্পেশাল ট্রেনটি বন্ধের ঘোষণায় সর্বস্তরের মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চট্টগ্রামের নানান শ্রেণি পেশার মানুষ তুমুল সমালোচনা করেছেন রেলওয়ের।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ‘কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি আজকে থেকে (গতকাল ৩০ মে) বন্ধ হয়েছে। এই মুহূর্তে ইঞ্জিন সংকট প্রকট। তাই আমাদের করার কিছু নেই। তবে ঈদে আবার চালু হবে।’ রাতে জানানো হয়, ১২ জুন থেকে এ ট্রেন আবার চালু হবে।