চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত রাউজান উপজেলা শিক্ষাদীক্ষা- সংস্কৃতিতে একটি প্রাগ্রসর এলাকা। উপজেলার কেন্দ্রস্থলে রাউজান পৌরসভার এক বর্ধিষ্ণু গ্রামের নাম সুলতানপুর। এ গ্রামের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত মুকিম বাড়ির পূর্ব পুরুষ ছিলেন মোগল আমলের পদাতিক বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান শেখ বড় আদম লস্কর এর বংশধর। এরই অধঃস্তন বংশধর মরহুম বেলায়েত আলী চৌধুরী ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার ঔরসে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুলাই মোহাম্মদ আবদুল খালেক এর জন্ম।
গরীব দুঃখী মানুষকে ভিক্ষা করতে দেখলে তিনি বেদনাহত হতেন। বাড়িতে ভিক্ষুক আসলে সবার অলক্ষ্যে মোটকা (চাউল রাখার ভান্ড) থেকে চাউল এনে বিলিয়ে দিতেন। ধার্মিক ও সুস্থ মূল্যবোধ সম্পন্ন পরিবারে বেড়ে উঠার কারণে তাঁর মধ্যে উন্নত মানসিকতা ও নৈতিকতাসম্পন্ন চরিত্রের সমাহার ঘটে। নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয়ে তিনি নিজেকে বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন আলোকিত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন বিধায় সমাজকে আলোকিত করতে অবদান রাখা সম্ভব হয়েছিল। তিনি ২য় ও ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বঙ্গীয় বৃত্তি লাভ করে সকলের প্রশংসা অর্জন করেন।
একই স্কুল থেকে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রাস (এস এস সি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম হয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেন। ১৯১৪ সালে জেলা বৃত্তি নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই এস সি পাস করে মাসিক পনেরো টাকা বৃত্তি লাভ করেন। কলিকাতা শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাস করে ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন।
১৯২০ সালে চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে সহকারী তড়িৎ প্রকৌশলী পদে চাকরি শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান। অধিকতর মহত্বের কাজে মানব কল্যাণ ও সমাজ সেবার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ থাকার কারণে তিনি ১৯৩২ সালে চাকরীতে ইস্তফা দেন। কোন এক সময় সহপাঠী আবদুল জলিল বিএ (আলীগড়) মাস্টারের সাথে স্বল্প সময়ের জন্য রেঙ্গুন গমন করেন। জলিল সাহেব ইস্পাহানি আবাসিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে রেঙ্গুনে কর্মরত ছিলেন, সেখানে থাকাবস্থায় বন্ধুবর জলিল সাহেবের সৌজন্যে আওলাদে রাসূল (৩৮তম) কুতুবুল আউলিয়া হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (বাঙালী মসজিদের খতীব)’র সাথে সাক্ষাৎ প্রাপ্ত হন। সে সময়েই ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বন্ধু আবদুল জলিলের উৎসাহে হুজুরের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ধন্য হন।
সাদা কালো শশ্রুমন্ডিত দুধে আলতা রং মেশানো সৌম্যকান্তি চেহারায় নূরানী ঝলক উদ্ভাসিত হতো সর্বদা। আকর্ষণীয় নূরানী চেহারার দিকে তাকালে অজান্তে শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে উঠতো যে কারো মন। আমি অনেকবার গ্রামের বাড়িতে ও শহরে তাঁকে দেখেছি। এখনো আমার মনে তাঁর নূরানী জ্যোতির চেহারাখানা ভেসে ওঠে। তিনি ছিলেন আমার জেঠতুতো ভাইয়ের শ্বশুর। সে সুবাদে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি যখন তাঁর গ্রামের বাড়িতে তশরীফ নিয়ে অবস্থান করতেন তখন বহুবার সেখানে গিয়েছি।
ব্যবসায়ী জীবনের শুরুতে ১৯২৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন কোহিনূর লাইব্রেরি। জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের মহাসোপান হচ্ছে লাইব্রেরি বা পাঠাগার। বিনে পয়সায় গরীব শিক্ষার্থীদের বই প্রদান, পত্রিকা পড়া ও বই পড়ার সুযোগ ছিল কোহিনূর লাইব্রেরিতে। জ্ঞানার্জন ও পাঠক সৃষ্টি করার গভীর প্রত্যয় নিয়ে তিনি প্রথম এ ব্যবসার গোড়াপত্তন করেন। কিছুদিনের মধ্যে (১৯৩০ সালে) কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস স্থাপন করেন। ছাপাখানা জগতে নবদিগন্তের সূচনা করেন। উভয় প্রতিষ্ঠান ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা মোড়ের দু’পাশে অবস্থিত। অর্থপ্রাপ্তির চেয়ে বইপড়া, জ্ঞানসমৃদ্ধ হবার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনেই তিনি পাঠাগার ও ছাপাখানা স্থাপন করেন একটি অপরটির পরিপূরক হিসেবে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের চট্টগ্রামের গৌরব লেখক কবি মাহবুব আলম চৌধুরী শহীদদের উদ্দেশ্য করে রচনা করেন ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, এক অমরগাথা দীর্ঘ কবিতা। তৎকালীন নুরুল আমিন সরকারের প্রশাসনের নির্যাতনের ভয়ে সেই কবিতাখানা ছাপাতে কেউই রাজি হননি। অমিত সাহসের অধিকারী ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের মাতৃভাষার প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর প্রেস থেকে ছাপিয়ে দেন। একুশের প্রথম কবিতা ছাপিয়ে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সর্বমহলে প্রশংসিত হন । দৃঢ়তা ও সাহস প্রত্যক্ষ করে আপামর জনতা আরেকবার বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এ মহানুভব ব্যক্তিত্বকে।
প্রাথমিক হতে কলেজে পড়া অবধি সবসময়ই ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ধর্মীয় কার্যাদি যথাসময়ে নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন। কোহিনূর লাইব্রেরি ও কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস স্থাপন করে লেখক পাঠক ও জ্ঞানচর্চার ধারা রচনা করলেও স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহের ব্যাপারে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা ও যুক্তিনির্ভর পরামর্শ উপস্থাপন করতে হলে একটি সংবাদপত্র প্রয়োজন, যেখানে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভব হবে। এ উপলব্ধি হতে তিনি সাপ্তাহিক কোহিনূর এবং ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদী পত্রিকা বের করেন।
দৈনিক আজাদী প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি আপন মুর্শিদ আউলাদে রসূল কুতবুল আউলিয়া হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর দো‘আ প্রার্থনা করেন। হুযুর পত্রিকার গ্রহণযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের জন্য দোআ করেন এবং হুজুরের মুরীদানদের সকলকে একখানা পত্রিকা ক্রয় করে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। হুজুর আরো বলেছিলেন চট্টগ্রামে কোন পত্রিকার প্রকাশনা স্থায়ী হয়নি। এ পত্রিকা স্থায়ীভাবে দ্বীন মিল্লাত মাযহাব ও কওমের খেদমত আঞ্জাম দিবে ইনশাআল্লাহ্। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়েও বন্ধুরপথ পাড়ি দিয়ে ‘দৈনিক আজাদী’ বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলেছে। এ পত্রিকার বৈশিষ্ট্য হলো, শরীয়ত তরিকত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রচার প্রসারে অনন্য ভূমিকা পালন ও লেখক কবি সাহিত্যিক সৃষ্টি করা, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা আজিজুল হক আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র ওপর ওহাবীদের সশস্ত্র আক্রমণ ও দৈহিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং আদালতে মামলা চলাকালে সার্বিকভাবে সহায়তা করার ফলে দোষীদের জেল জরিমানা হয়েছিল। ভিক্ষুক আসলে তাকে আজাদী পত্রিকার কতগুলো কপি হাতে দিয়ে এগুলো বিক্রি করে কমিশন নিয়ে জীবিকার্জন করার পরামর্শ দিতেন। এভাবে অনেক পত্রিকা হকার সৃষ্টি করেছেন তিনি।
রেঙ্গুনে গিয়ে তিনি পীর ছাহেব ক্বিবলা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে চট্টগ্রাম আসার অনুরোধ জানান। কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের ওপর তলায় হুজুর ক্বিবলা অবস্থান করতেন বিধায় এটা খানকাহ শরীফ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখান হতে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া তথা সুন্নীয়তের আন্দোলনের গতি সঞ্চার হয়। ১৯৪২ সাল হতে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর হুজুর চট্টগ্রাম তথা পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের ওপরের তলায় অবস্থান করে শরীয়ত তরীক্বতের যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতেন। ঐতিহাসিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কোহিনূর লাইব্রেরির ওপর তলায় তাঁরই উপস্থিতিতে হতো। তিনি আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদে অধিষ্ঠিত থেকে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। হুজুর সিরিকোটি (রাহ.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছাহেবের খেদমত ও দ্বীন-মাযহাব মিল্লাতের প্রচার-প্রসারে নিঃস্বার্থ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রিয় মুরীদানকে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার খেলাফতদানে গৌরবান্বিত করেন। নিরহংকার, সদা হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তি, স্নেহ-মমতায় কথোপকথন, প্রচার-বিমুখ কার্যক্রম তাঁকে পীর ভাইসহ সকল পেশা শ্রেণির মানুষের নিকট অত্যন্ত প্রিয়ভাজন করে তুলেছিলেন। হুজুর ক্বেবলার সফরসঙ্গী হয়ে তিনি হজ্বব্রত পালন করেছেন। ১৯৫৮ সালে হুজুর দৌহিত্র সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ও একমাত্র ছাহেবজাদা গাউসে জমান হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম সফরে এসে প্রায় ৬/৭ মাসব্যাপী অবস্থান করেন। হুজুর এখান হতেই ৩০/৩৫ জন মুরীদসহ স্টিমারযোগে হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে জেদ্দা যাত্রা করেন। এটাই ছিল সিরিকোটি (রাহ.)’র শেষ হজ্ব এবং চট্টগ্রাম তথা পূর্ব পাকিস্তানে আখেরী সফর। হজ্ব শেষে হুজুর স্বদেশ (পেশোয়ার) প্রত্যাবর্তন করেন। হুজুর দেশে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হুজুরকে চট্টগ্রাম আনার জন্য ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের নেতৃত্বে ৮/১০ জন নেতৃস্থানীয় পীরভাই সিরিকোট শরীফ গমন করেন। কিন্তু হুজুর আসেননি। হুজুর বলেন, মন চায় যাবার জন্য, কিন্তু ওপরওয়ালার হুকুম নেই। সুস্থ হলেই সফরে আসবেন এ রকম কথা বলে ভাইদের বিদায় দেন। মনঃক্ষুন্ন হয়ে ভাইয়েরা হুজুরের দোয়া নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। তিনি প্রাণপ্রিয় মুর্শিদকে আনতে না পেরে খুবই ব্যথিত হয়েছিলেন। বুঝতে বাকি রইলোনা যে, হুজুর তাঁদের ছেড়ে চলে যাবেন।
১৯৬১ সালের ২২ মে শাহেনশাহে সিরিকোট আওলাদে রসূল, সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি ইন্তেকাল করেন (ইন্না……রাজেউন)। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব মুর্শিদের বিয়োগ ব্যথায় শোকাতুর হয়ে পড়েন। মুর্শিদের সাথে বিচ্ছেদ তাঁকে খুব বেশী মর্মাহত করেছিল। অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এ মহান ব্যক্তিত্ব সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র পীরভাইদের নয়নমণি সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু সমাজ সচেতন আলোকিত মানুষ শ্রদ্ধাস্পদ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেউন)। মানবসেবা ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। একথা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস ও চর্চা করতেন কখনো নিরবে নিভৃতে, কখনো প্রকাশ্যে। ১৯৩৮ সালে তুরস্কে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে দুর্গত মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করে সংগৃহীত অর্থ তুরস্কে প্রেরণ করেন।
১৯৬০ সালের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে ত্রাণ কমিটি গঠন করে তিনি সাহায্য করেন।
মেধা ও মননের সংমিশ্রণে তিনি সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। জ্ঞান নির্ভর সমাজ নির্মাণে আল্লাহ্-রসূল প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে তাঁর সমুদয় কর্মকান্ড আবর্তিত হতো। নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী, জনদরদী, ফানাফিশ্ শায়খ, সহজ-সরল, নিষ্ঠাবান, ধার্মিক ব্যক্তি আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন এক বিরল ব্যক্তিত্ব। তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আদর্শ ব্যক্তি। তাঁর সমকক্ষ মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তিনি শুধু লাইব্রেরি, ছাপাখানা, পত্রিকা, মাদরাসা, খানকা প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি নিজেও একজন সুলেখক, সমালোচক, সংবাদকর্মী হিসেবে সমধিক পরিচিত।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের লিখিত ১৭টি বইয়ের নাম পাওয়া যায়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আপন মুর্শিদের দিকনির্দেশনা, হেদায়ত আমল করে কাটিয়েছেন। তিনি যেমন মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তেমনি আল্লাহ্-রসূল (দ.)’র সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে শরীয়ত-তরীকতের প্রতি ছিলেন প্রশ্নাতীত বিশ্বাসী ও নিবেদিত প্রাণ। আনজুমান ও জামেয়া তথা সিলসিলার প্রচার-প্রসারে তাঁর অমূল্য অবদানের কারণে তিনি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল পথিকৃৎ। তাঁর আদর্শ অনুসরণে আমরা হতে পারি আল্লাহ্-রসূল (দ.)এর নৈকট্যধন্য ও মুর্শিদে বরহকের যোগ্য মুরীদ। আমাদের এ অভিভাবকের দরজা আল্লাহ্ জাল্লাশানুহু বুলন্দ করুন।
লেখক: প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী, আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাসট, বাংলাদেশ।