ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ভোরের জ্যোতির্ময় উজ্জ্বলতা

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকবি রবীঠাকুরের ‘মৃত্যুর পরে’ কবিতার অসাধারণ পংক্তিগাঁথায় হৃদয়ের গভীরতম আবেগের উপস্থাপন পরিশুদ্ধ ব্যক্তিমানস স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেককে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্দেশ্যেই যেন নিবেদিত। অকৃত্রিম ধার্মিক-অসাম্প্রদায়িক আধ্যাত্মিকতার অতি উঁচুমার্গে অধিষ্ঠিত ক্ষণজন্মা, অবিচল অনুরাগ ও নিষ্ঠার অপরূপ দৃষ্টান্ত চট্টগ্রামের প্রথম মুসলিম বিদ্যুৎ প্রকৌশলী প্রয়াত আবদুল খালেক’র প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ‘জানি না কিসের তরে যে যাহার কাজ করে সংসারে আসিয়া,/ ভালোমন্দ শেষ করি যায় জীর্ণ জন্মতরী কোথায় ভাসিয়া।/ দিয়ে যায় যত যাহা রাখো তাহা, ফেলো তাহা যা ইচ্ছা তোমার/ সে তো নহে বেচাকেনা- ফিরিবে না, ফেরাবে না জন্ম উপহার।’ উল্লেখ্য চরণসমূহে এটি প্রবল প্রতিফলিত যে; জন্মের সাথেই মৃত্যুর দিনক্ষণ নির্ধারিত থাকে এবং অধরা ক্যানভাসে উদ্ভাসিত ইহ-পরকালের দোলাচলে কালান্তরে কর্মপরিধির পরিমাপে মানবসন্তানের পরিচিতি সুস্পষ্ট হয়। বিদ্যুৎ প্রকৌশলীর অভিজ্ঞানে বিজ্ঞানের জটিল রসায়ন অনুধাবন ও প্রকৃত অর্থেই না ফেরার দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণে তাঁকে বিস্মৃত না করার সকল কর্মযজ্ঞ অতি সুচারুরূপে তিনি সম্পন্ন করে গেছেন।
মাটি ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধের বহি:প্রকাশই যে মানব কল্যাণের প্রণিধানযোগ্য অনুষঙ্গ; জীবনের প্রতিটি কর্মে তার উন্মেষ ঘটিয়ে প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার শুধু খ্যাতিমান হননি, রেখে গেছেন অক্ষয় জ্যোতির মতো অবিনশ্বর জীবনকাব্য। চট্টগ্রামবাসীর প্রতিদিনকার সকাল অত্যুজ্জল হয় যে পত্রিকাটির নিগূঢ় আচ্ছাদনে; সেই দৈনিক আজাদী পত্রিকা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ভোরের জ্যোতির্ময় উজ্জ্বলতায় কৃতাহ্নিক প্রতিবিম্বের মতো প্রতিদিনই স্মরণযোগ্য হয়ে ওঠেন। সভ্যতার অপরিমেয় অবদান হচ্ছে মানবসৃষ্ট মানবিক সৃজনশীলতা-মননশীলতা-নান্দনিকতা। জ্ঞানাঙ্কুর একাগ্রতা পরিচর্যার সার্থক রূপায়ন কৃষ্টি-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির চন্দ্রোদয় অবগাহনে পরিপুষ্ট। বৃদ্ধিবৃত্তিক সমাজের পরিশীলিত গবেষণায় প্রাপ্ত নবতর আবিষ্কার ও অভিজ্ঞতার চারণভূমি আধুনিক এই ধরিত্রী। জীবন প্রবাহের নৈর্ব্যত্তিক গতিশীলতা ও জনমুখী আর্থ-সামাজিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিকাশমানতায় গণমাধ্যমের চিরায়ত ভূমিকা নিরন্তর প্রশংসিত ও সমাদৃত। এটি সর্বজনবিদিত যে সামষ্টিক প্রকৃতি, মাত্রিকতা ও কার্যপদ্ধতি-পরিধি অবশ্যই ব্যক্তিমানস থেকে স্বতন্ত্র। এমিল ডুর্খেইম ও উইলিয়াম ম্যাকডোগাল এর মতো অনেক খ্যাতিমান সমাজ-মনোবিজ্ঞানীর মতানুসারে; ব্যক্তিহৃদয়ের যৌগিক ফলাফল হচ্ছে সমষ্টিগত মনন-মানসিকতা। এর পিছনে অনবদ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকে ভাব ও বস্তুর পরিবর্তনশীল সামঞ্জ্যপূর্ণ মিথস্ক্রিয়া।
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান সুলতানপুর গ্রামের প্রয়াত পিতা মোহাম্মদ বেলায়েত আলী চৌধুরী এবং মাতা ফজিলাতুন নেছার সন্তান ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ১৮৯৬ সালের ২০ জুলাই জন্ম গ্রহণ করে কালক্রমে চট্টগ্রামের কিংবদন্তী অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক হিসেবে একাশ্রিত কৃতী মানবের অবস্থান চিত্রিত করেছেন। সাধারণ ব্যক্তিসত্ত্বার মধ্যে অসাধারণ গুনাবলীর পাদপীঠে মানুষ যে যুগান্তকারী আদর্শ হিসেবে দেশবাসীর অন্তরে বিকশিত হতে পারেন; প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তার প্রকৃষ্ট উপমা ও স্মারক হিসেবে আজ সকল মহলেই অনুকরণীয়। শ্রদ্ধেয় আবদুল খালেক গ্রামে প্রাথমিকের পাঠ শেষে রাউজান আর আর এ সি ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯১২ সালে প্রবেশিকা এবং ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯১৯ সালে প্রথম বিভাগে স্বর্ণপদকসহ তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতা শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। শিক্ষাজীবন শেষে তাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। এরপর তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে কিছুকাল রেঙ্গুনে এবং পরে দেশে এসে চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীতে চাকরি করেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালুর পিছনে তাঁর অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি এখনও খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন।
শ্রদ্ধাভাজন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ১৯২৯ সালে বই প্রকাশনা ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ‘কোহিনুর লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম বিদ্যুৎ চালিত ‘কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করে উক্ত প্রেস থেকে ১৯৫০ সালে নিজের সম্পাদনায় ‘কোহিনুর’ নামে একটি সাপ্তাহিক সমায়িকী প্রকাশ করেন। ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মুদ্রণ ও প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দৈনিক সংবাদপত্র ‘আজাদী’ সম্পাদনার মাধ্যমে ন্যায়নিষ্ঠ-নিরপেক্ষ সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা থেকে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও ড. এনামুল হক’র যৌথ গ্রন্থ ‘চট্টগ্রামী ভাষার রহস্যভেদ’ এবং আরাকান রাজ সভার বাংলা সাহিত্য প্রকাশের সুখ্যাতি সকলেরই কমবেশি জানা। এছাড়াও তিনি শওকত ওসমান, আবুল ফজল, সাদাত আলী আখন্দ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, সুচরিত চৌধুরী প্রমুখ অনেক সাহিত্যিকের বই-বিভিন্ন পত্রিকা-সাময়িকী প্রকাশ করেন।
মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তীতে দেশে কোন পত্রিকা প্রকাশ না পেলেও দৈনিক আজাদী পত্রিক প্রকাশ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে পত্রিকার অখন্ডিত অবয়বকে চিরঅম্লান করে তুলে। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, বিশ্বায়নের বিগত-চলমান শতাব্দীর প্রাথমিক-সমৃদ্ধ প্রদীপ্ত পর্যায়ে অবাধ তথ্য প্রবাহের প্রযুক্তি ও গুনগত উৎকর্ষতা সামগ্রিকভাবে বিশ্ব-জনগণের জীবন মান উন্নয়ন, নগরায়ন, শিল্পায়ন, দারিদ্র বিমোচন তথা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জনজীবনমানের প্রগতি-অগ্রগতির ধারায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের অবদান আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় দুর্দমনীয়। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানবতাবাদী জনমুখী ও সমকালীন বিজ্ঞানমনস্ক অনুক্রম মানসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়নে যুক্তি-জ্ঞান নির্ভর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নানামুখী অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রসমূহের গতিশীলতা অগ্রগণ্য চালিকা শক্তিরূপে পরিপক্ষ। হাতেগোনা দু’একটি কথিত প্রচারবহুল পত্রিকা এবং দু’চার জন অপসাংবাদিকতায় অভ্যস্ত নষ্ট চরিত্রের অর্থলিপ্সু ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বনকারীদের জন্য গণমাধ্যমের উপর মানুষের আস্থার সংকট কিছুটা কষ্টদায়ক হলেও দৈনিক আজাদী এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক ভাষা অন্দোলনের অলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রথম পুস্তিকাটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর। এই পুস্তিকাটি প্রকাশের উদ্যোক্তা ছিলেন চট্টগ্রামের অন্যতম কীর্তি পুরুষ অধ্যাপক আবুল কাশেম। ‘বাংলা ভাষাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন, আদালতের ভাষা ও অফিসাদির ভাষা’ অধ্যাপক আবুল কাশেমের বইয়ের মুখবন্ধে এই ভাবেই তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রামের বুকে হালদা নদীর কাছে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই মাদার্শার টেকে পাকিস্তানীরা প্রথম যে গণহত্যা সংঘটিত করেছিল, এই হত্যার প্রতিবাদ ও ঘটনা পরম্পরায় বস্তনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করার জন্য দৈনিক পূর্ব পাকিস্তানের সম্পাদক আবদুস ছালামকেও অর্থদন্ড ভোগ করতে হয়েছিল। মাতৃভাষার দাবিতে ঢাকায় শহীদদের আত্নত্যাগের স্মরণে চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান মাহবুব-উল-আলম রচিত প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ ছাপানো হয় চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকার সূতিকাগার কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস থেকে। এ পুস্তিকাটি ছিল একুশের প্রথম সংকলন। এই প্রেসের স্বত্তাধিকারী দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের অনুমতিক্রমে তৎকালীন প্রেস ম্যানেজার দবির আহম্মদ চৌধুরী প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে এই কবিতাটি ছাপানোর দায়িত্ব নেন। ফলস্বরূপ পাকিস্তান সরকার পুস্তিকাটি বাজেয়াপ্ত করে কহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসটির কাজ বন্ধ এবং দবির উদ্দিন সাহেবেকে ছয় মাস কারাবরণ করতে হয়।
দশেবাসীর হয়ত অনেকেরই জানা যে; ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক শিশুপাঠ্য ও শিশুতোষসহ বহু পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো – শহীদে কারবালা হযরত হোসাইন (রাঃ), হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ), বার আউলিয়া, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুন্ঠন (১৯৩০), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন (১৯৫৭), দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন, শেখে চাঁটগাম কাজেম আলী, নেপোলিয়ন, মৌলানা মোহাম্মদ আলী শওকত আলী, ইতিহাসের শহীদ, প্রাথমিক ভূগোল, বিজ্ঞান ও গ্রাম্য জীবন, রচনার প্রথম ছড়া, উর্দু প্রাউমার, বয়েস ইংলিশ গ্রামার, ফার্স্ট বুক অব ট্রান্সলেশন, চাইল্ড পিকচারওয়ার্ড বুক, ব্যাকরণ মঞ্জুষা, তাওয়াফ, ঝলমল (শিশুপাঠ), মুসলিম বাল্য শিক্ষা, সহজ পাঠ (শিশুপাঠ্য) প্রভৃতি। প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত হয়ে সম্পূর্ণ অলাভজনক জেনেও সংবাদপত্র প্রকাশের মতো দৃঢ়চেতা প্রেক্ষণে শ্রদ্ধেয় ইঞ্জিনিয়ার সাহেব চট্টগ্রামের নিত্যদিনের সুখ-দু:খকে জনসম্মুখে বিশেষ করে দেশের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণে যথার্থ সফল ও সার্থক হয়েছেন।
ধারাবাহিকতায় সংবাদ সংগ্রহ-পরিবেশন-লেখন-বিতরণ সামগ্রিক কর্মকৌশলের অভূতপূর্ব সমাহারে পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি একগুচ্ছ কলাকুশলী নির্মাণে তাঁর অনবদ্য প্রচেতা প্রভাতী আলোকরশ্মির মতোই পরম্পরায় শতবর্ষজীবীর অভিধায় সদম্ভে অভিষিক্ত হবেন – নি:সন্দেহে তা বলা যায়। ধার্মিকতায় নিখাঁদ এবং জনকল্যাণে তাঁর পদচারণার পাঠোদ্ধার-স্বরূপ উম্মোচন কিছুটা প্রতিস্থাপিত হলেও; তাঁকে বিপুলভাবে পরিখ্যাত করার মানসে অধিকতর পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ এবং গবেষণা সম্পাদনের দাবি বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে অতিশয় উচ্চকিত। দেশে সুন্নিয়ত তরিকতের প্রচার-প্রসারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান অনস্বীকার্য। তিনি সুফি দর্শনের অন্যতম লক্ষ্য মানবকল্যাণকে জীবন নির্বাহের সারবত্তা হিসেবে শুধু ধারণ করেন নি; দৃশ্যমান করেছেন কর্মপরিকল্পনার অনুপম প্রায়োগিক স্থাপনা। চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও উপমহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক শিক্ষক হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (র.) এর প্রধান খলিফা হিসেবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ-দলমত-অঞ্চল নির্বিশেষে তাঁর অবারিত সর্বজনীন সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-আনন্দের পুষ্পিত কর্মপ্রেরণায় দেশের আপামর জনগোষ্ঠী সত্যিই অভিভূত-উপকৃত।
১৯৬২ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর তাঁর পরলোকগমনের পরে তাঁকে আবিষ্কারে যে অধ্যায়গুলো রচিত হয়েছে তা এখনো পরিপূর্ণ অসম্পূর্ণ। দৃঢ় বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে বলতে পারি; সময়ের আবর্তনে অনাবিষ্কৃত কৃতি পুরুষের সামগ্রিক চন্দ্রোদয়ে কোন এক সময় অবশ্যই তাঁর সৌভিক বিভাবন বিমূর্ত হবেই। রবীঠাকুরের ‘প্রাণ’ কবিতার পংক্তি উচ্চারণে প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের তেজোদীপ্ত পরিব্রাজনে আত্মপ্রত্যয়-আত্মসংযম-আত্মত্যাগের মহিমা প্রজ্জ্বলনে তাঁর কর্মসম্ভার তাঁকে চিরদিনই মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবেই। ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।/ এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে/ জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই।/ ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,/ বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রু-ময়,/ মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত/ যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয়।’ প্রয়াণ দিবসের এই ক্ষণে মহান স্রষ্টার দরবারে তাঁর আত্মার অপার শান্তি প্রার্থনা করছি। তাঁর সুযোগ্য পুত্র সত্যনিষ্ঠ-জনপ্রিয় সম্পাদক সর্বজনশ্রদ্ধেয় জনাব এম এ মালেক এবং আজাদী পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের শুভ ও মঙ্গল কামনা করে নিবন্ধের ইতি টানছি।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকীর্তিমানের কীর্তিকথা
পরবর্তী নিবন্ধসব ফোনের জন্য একই চার্জার চায় ইইউ