চট্টগ্রামে সংবাদপত্র শিল্পের অগ্রদূত, এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম সুহৃদ, দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর মাত্র দুই বছর আগে ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রামের মানুষের অভাব–অভিযোগ ও স্বপ্ন–আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরতে প্রকাশ করেছিলেন দৈনিক আজাদী। যা আজ ৬৫ বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের মুখপত্র হিসেবে পথ চলছে।
রাউজানের প্রত্যন্ত গ্রাম সুলতানপুরে জন্ম নেওয়া আবদুল খালেক ছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার। মেধা ও অধ্যবসায়ের বলে ভারতের শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে চট্টগ্রামের বিদ্যুতায়নে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষের সংকট ও সমস্যার কথা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে সরকারি চাকরির নিরাপত্তা ও সুযোগ–সুবিধা ছেড়ে তিনি বেছে নেন এক কঠিন পথ, পত্রিকা প্রকাশনা।
৬৬ বছর আগের প্রেক্ষাপটে একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা কী পরিমাণ কঠিন ছিল আজ তা কল্পনাও করা যাবে না। মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার চট্টগ্রামের মানুষের জন্য সেই কঠিন কাজটি বেছে নিয়েছিলেন। কেবল পত্রিকা প্রকাশ, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা বা ছাপাখানা স্থাপন করে ক্ষান্ত হননি, আলোকিত মানুষ তৈরির কাজেও আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তাঁর সহায়তা পেয়ে অনেকেই পরে কবি–সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল হযরতুল আল্লামা ছৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটির (র.) এ অঞ্চলের প্রথম খলিফা আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার ব্যক্তিগত জীবনে সৎ ও ধর্মভীরু ছিলেন। দেশের বিখ্যাত ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পেছনে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তাঁর শেষশয্যাও রচিত হয়েছে এই বিদ্যাপীঠ অঙ্গনে।
মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ মমত্ব। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মানুষকে ভালোবেসে গেছেন। ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের এই কৃতী পুরুষ আন্দরকিল্লাহ জেনারেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আন্দরকিল্লাকে ‘ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক চত্বর’ হিসেবে নামকরণ করেছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁর নামে একটি হলের নামকরণ করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার স্মৃতিবৃত্তি প্রদান করা হয়।