ইছামতির ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শুক্রবার , ১৫ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটির ঘাগড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হওয়া ৩৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের (২৩ মাইল) ইছামতি নদীর বিভিন্ন স্পটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থাপনা। নদীর বিভিন্ন স্পটে ব্লক স্থাপনের কারণে কিছু এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধ হলেও বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে তাও হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অল্প বৃষ্টিতে এই নদীতে পাহাড়ি ঢল বয়ে যায়, তখন পানি উপচে প্লাবিত হয় আশেপাশের গ্রাম। এ সময় ভাঙনের তীব্রতাও বেড়ে যায়। সরেজমিনে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউছার নগরে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভা হলেও উন্নয়নে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে গ্রামটি। গ্রামের ইছামতি নদীপাড়ের আনুমানিক এক কিলোমিটার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে প্রতিবেদককে ভাঙনের ফলে বিলীন হওয়া সড়ক, মসজিদ, কবর স্থান, গাছপালা ও ঘরবাড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন স্থানীয়রা। এমন কী পাহাড়ি ঢলে উপচেপড়া পানির তীব্রতায় নদীর কয়েক স্থান দিয়ে সরু করে ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার চিত্র দেখা গেছে। গ্রামের অপরপাড়ে পারুয়া ইউনিয়নের গোয়াছপাড়া, সাহাব্দী নগর এবং পৌরসভার সোনাইছড়ি গ্রামে ব্লক স্থাপনের পর এপাড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

কাউছার নগর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফোরকান জানান, ইছামতী নদীর ভাঙনের ফলে প্রধান সড়কটি এখন ভেঙে যাচ্ছে। যখন বৃষ্টি হয় পাহাড়ি ঢলে পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ডুবে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আব্দুর রহমান নামে একজন জানান, সমপ্রতি পাহাড়ি ঢলে গ্রাম প্লাবিত হলে কাউছার নগর সড়কের মাঝখানে ধসে যায়। তখন সরকারি অনেক দপ্তরে ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি। পরে গ্রামের মানুষ নিজেরা টাকা উঠিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে সেটি সংস্কার করেন।

গ্রামের হামিদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যেই ভাঙনের ফলে প্রায় শত বছরের পুরাতন কবর স্থানের অর্ধেক ভেঙে গেছে। এছাড়া মসজিদটিও ভেঙে গেলে স্থানীয়রা তা অন্যত্র স্থাপন করেছেন। ভাঙনের কারণে সড়কটিও ধসে যেতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে পুরো গ্রামটি একসময় বিলীন হয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সামশুল আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, ইছামতীর ভাঙন থেকে রক্ষায় দ্রুত যেনো ব্লক স্থাপন করা হয়। এতে গ্রামের সাধারণ মানুষ ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

জানা যায়, শুধু এই স্পটেই নয়ইছামতী নদীর ভাঙনে রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর, পারুয়া ও পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নদীর দুপাড়ের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ভাঙনের কবলে পড়ছে। নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষজন তাদের ঘরবাড়ি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; ফলে ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিলে উপজেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু এরপরও বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। ভাঙনে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ চান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, ইছামতীর ভাঙন থেকে রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুলশী থানার ওসি প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধরাতের কাপ্তাই সড়কে দুই সিএনজি টেক্সির মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ৫