ইচ্ছেমতো জীবনযাপন যে দ্বীপে

রেজাউল করিম | বুধবার , ২১ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বে এটা এক আশ্চর্য রকমের দ্বীপ। যে দ্বীপের জনসংখ্যা চারশ’ জন। দিনরাত বলতে কিছু নেই। যখন খুশি খান, যখন খুশি গোসল করেন, যখন খুশি খেলতে যান, মাছ ধরেন। পৃথিবীর এই জায়গার নাম সোমারয় দ্বীপ। উত্তর ইউরোপের দেশ নরওয়ের একটি দ্বীপ। ‘পাথর পাথর আর চারদিকে দিগন্তরেখার/

নীচে যে কুহক জল/ সে মাড়িয়ে চলে যায় গোড়ালি অবধি বালি/ গাঙপায়রাদের ডানার শুভ্রতা নিয়ে/ সে দ্যাখে উজ্জ্বল রোদ/ নৌকাটির সারা গায়ে

মাছদের আঁশ লেগে আছে/ এ গভীর মীনরাজ্য/ পাথরের সিঁড়ি বেয়ে

নেমে যাবে/ আদিম স্ফটিক স্বচ্ছ জলে।’

সময় অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের দিকে যায়। অতীত মানুষের স্মরণে থাকে। ভবিষ্যৎ থাকে অজানা। এটাই সময়ের গতিপথ। বিজ্ঞানের এক ধ্রুব সত্য। এই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম নেই। সময়কে চোখে দেখা যায় না। শুধু ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে মেপে নিতে হয়। সময়কে কোনো বেড়াজালে আটকে রাখা যায় না। তবে সে আছে। আছে প্রতিটি নিঃশ্বাসে। মানুষের বিশ্বাসে। মানুষ সময়ের কাছে বাঁধা। কিন্তু এমন এক জায়গা এই পৃথিবীর বুকে রয়েছে, যেখানকার মানুষ সময়ের ধার ধারেন না। জনসংখ্যা সবমিলিয়ে চারশ জনের মতো হবে।

সোমারয় দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবনে সময়ের তেমন ‘দাম’ নেই। ঘড়ি ধরে কোনো কাজ করেন না তারা। যখন খুশি জাগেন, যখন খুশি ঘুমোতে যান, যখন খুশি খাবার খান। জীবনের কোনো নির্দিষ্ট ছক নেই। কিন্তু কেন এমন জীবন সোমারয়ের বাসিন্দাদের? আসলে সোমারয় দ্বীপে মে মাসের ১৮ তারিখ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৯ দিন সূর্য অস্ত যায় না। আবার মেরুবৃত্তের উত্তরে থাকার কারণে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ সময় সূর্য ওঠে না। রাতের আঁধারে সময় কাটে সোমারয়বাসীর।

আর সেই কারণেই ঘড়ি ধরে কোনো কাজ করেন না সোমারয়ের বাসিন্দারা। সূর্য অস্ত না যাওয়ার কারণে ওই ৬৯ দিনের মধ্যে স্থানীয় সময় যখন রাত ৯টা বাজার কথা, তখনও দ্বীপের মানুষ সাঁতার কাটা, পাহাড় চড়ার মতো কাজ করেন।

পাহাড়ে ঘেরা সোমারয়ে মূলত মৎস্যজীবীদের বসবাস। মাছ ধরেই জীবনযাপন করেন তারা। মৎস্যশিল্পের জন্য পরিচিতি রয়েছে এই দ্বীপের। সোমারয় দ্বীপে প্রতি বছর পর্যটকদের সংখ্যা কম নয়। এখানে ছোট ছোট অনেক হোটেল এবং কেবিন পর্যটকদের ভাড়ায় দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের জুন মাসে নরওয়ের সরকারি দপ্তর ‘ইনোভেশন নরওয়ে’ একটি প্রচার অভিযান চালিয়েছিল। ওই প্রচার অভিযানে বলা হয়, সোমারয়ের স্থানীয়রা চান যেন দ্বীপটিকে বিশ্বের প্রথম ‘টাইমফ্রি জোন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

সোমারয়ের মানুষ নাকি সরকারের কাছেও দ্বীপের মধ্যে নাগরিক সময় বাতিল করার আবেদন জানিয়েছিলেন। এর পরেই বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সেই খবর করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে হাজার দুয়েক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল দেশবিদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছে নরওয়ে সরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতালপিঠা ও ছোটআম্মু
পরবর্তী নিবন্ধচমেক অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ