ইচ্ছেমতো চলছে গাড়ি মোড়ে মোড়ে যানজট

মামলা আর টো করার কাজে ব্যস্ত ট্রাফিক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট। প্রতিদিন যাত্রীরা ছাড়াও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মালামাল পরিবহনে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের মোড়ের জট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যানজট ৭০ শতাংশ কমে আসবে। তবে বাস্তবতা হলো, সেই জট দূর করতে নগরীর অধিকাংশ মোড়েই দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ও কনস্টেবলদের কোন ভূমিকা থাকে না। তারা ব্যস্ত থাকেন মামলা কিংবা টো করার কাজে। সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন মোড় ঘুরে এ দৃশ্য চোখে পড়েছে। গাড়ি চলছে ইচ্ছে মতো, মাঝ রাস্তায় হঠাৎ দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে যে যার মতো। পথচারী পারাপার করছে সুবিধে মতো।

এ প্রসঙ্গে সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, সিএমপিতে প্রয়োজনের তুলনায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা এমনিতেই কম। তাই আমরা পিক আওয়ার ও অফ পিক আওয়ার এ দুই ভাগে ভাগ করেছি। পিক আওয়ার হচ্ছে সকাল ৯ টা থেকে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত আর বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। আর বাকি সময়টা অফ পিক আওয়ার। পিক আওয়ারে সার্জেন্ট ও কনস্টেবলদের পাশাপাশি সিনিয়র অফিসাররাও মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। এখন যানবাহনের শৃঙ্খলা আনতে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ট্রাফিক পুলিশ টানা আট ঘণ্টা শ্রম দিচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক মিনিটের জন্য যদি তারা বিশ্রাম নেয় বা ওয়াশরুমে যায়, তার জন্য কি তাকে দোষ দেওয়া যায়?

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার দৃশ্য চোখে পড়ে। আন্দরকিল্লার মোড়, কাজির দেউড়ি মোড়, জিইসির মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, নিউমার্কেট মোড়সহ বিভিন্ন সিগন্যাল পয়েন্টে ছিল না শৃঙ্খলা। নিউমার্কেট মোড়ে রাস্তার ওপরেই দাঁড়িয়ে থাকে বাস ও রাইডার। ৪, , ৭ ও ৮ নম্বর রুটের গাড়ি মোড়ের যাত্রীছাউনি থেকে নতুন রেলস্টেশন পর্যন্ত এলোপাথাড়িভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। ১, ২ ও ৩ নম্বর রুটের গাড়ি কোতোয়ালী মোড়ে যাওয়ার আগে নিউমার্কেটের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। এতে মোড়ের মধ্যে জটলার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে চকবাজার মোড়ের জটলা বহুমুখী।

আন্দরকিল্লা মোড়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টা ৩৯ মিনিটে দেখা যায় যানবাহন চলছে ইচ্ছে মতো। কর্তব্যরত সার্জেন্ট তাঁর মোটর সাইকেলে বসা ও কনস্টেবল পাশে দাঁড়িয়ে একান্তে আলাপ করছেন।

ওয়াসার মোড়ে একইদিন বেলা ১১ টা ৫৭ মিনিটে দেখা যায় যান চলাচল তেমন নেই। পথচারীরা ইচ্ছেমতো পার হচ্ছে। কাজীর দেউড়ি মোড়ে ১১ টা ৫১ মিনিটে দেখা যায় ট্রাফিক কনস্টেবল দু’জন একপাশে আলাপে ব্যস্ত। যানবাহন কার আগে কে যাবে এই চেষ্টায় ব্যস্ত। প্রবর্ত্তক মোড়ে বেলা ১২ টা ৫১ মিনিটে দেখা যায়, নিজস্ব গতিতে চলছে গাড়ি, আর সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পুলিশ বক্সে ব্যস্ত রয়েছেন।

মোড়কেন্দ্রিক এই জট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে চট্টগ্রাম শহরের ৭০ শতাংশের বেশি যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘প্রতিটি মোড়ের কেন্দ্র থেকে সর্বনিম্ন ২৫০ ফুটের মধ্যে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে না দিলে নগরীর ৭০ শতাংশের বেশি যানজট কমে আসবে। এতে মোড়গুলো ফ্রি থাকবে এবং গাড়ি সহজে যাতায়াত করতে পারবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারী বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজার পুলিশের কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল সবাইকে বদলি