প্রকাশনা উৎসবে আলোচকরা বলেন, সং্গীতশিল্পী ও লেখক ইকবাল হায়দার একজন জাতশিল্পী। তিনি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনো শিল্পী নন। তাঁর মধ্যে রয়েছে অনেক গুণ। তিনি বহুমাত্রিক। একাধারে শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, লেখক, গবেষক ও ব্যাংকার। তাঁর প্রকাশিত তিন গ্রন্থে সংগীতের ইতিহাস–ঐতিহ্য তথ্য–উপাত্তের সাথে আকর্ষণীয় বর্ণনায় প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের গান, মরমী গান, আধ্যাত্মবাদ, সুফিবাদ, আধুনিকতা ও লোকসংগীতের বিষয়–আশয় চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে প্রকাশিত গ্রন্থগুলোতে। তাঁরা আরও বলেন, এখন যারা সংগীত চর্চা করছেন তাদের উচিত গানের সুর অবিকৃত রেখে সংগীত সাধনা করা। আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এমন সুর–সংগীত সাধারণ শ্রোতার কাছে পরিবেশন করা।
গত ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় চট্টগ্রাম একাডেমির ফয়েজ নুরনাহার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা উৎসবে আলোচকরা কথাগুলো বলেন। চট্টগ্রাম একাডেমির আয়োজনে কালধারা থেকে প্রকাশিত বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও লেখক ইকবাল হায়দারের ৩টি বই যথাক্রমে ‘আমার রচিত যত গান’, ‘দরদীয়ারে বন্ধু’ ও ‘লোকসংগীতে আধ্যাত্মিকতা ও বিবিধ অনুষঙ্গ’ এর উপর আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ড. আনোয়ারা আলম, প্রফেসর রীতা দত্ত, কবি জসিম উদ্দিন খান। এতে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী। স্বাগত বক্তব্য দেন লেখক জাহাঙ্গীর মিঞা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ তরুণ কান্তি বড়ুয়া, অধ্যক্ষ ছন্দা চক্রবর্তী, কালধারা প্রকাশক শাহ আলম নিপু, কথাসাহিত্যিক দীপক বড়ুয়া, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিপুল বড়ুয়া, কবি অরুণ শীল, প্রাবন্ধিক ও সংগীত শিল্পী মৃণালিনী চক্রবর্তী, অধ্যাপক গোফরান উদ্দীন টিটু, প্রাবন্ধিক এস এম মোখলেসুর রহমান, অনুবাদক ফারজানা রহমান শিমু। অনুভূতি ব্যক্ত করেন শিল্পী ও লেখক ইকবাল হায়দার।
লেখকের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান আবৃত্তিশিল্পী তহুরা পিংকি। অনুষ্ঠান সঞ্চালক ছিলেন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কবি–সাংবাদিক রাশেদ রউফ।
‘লোকসংগীতে আধ্যাত্মিকতা ও বিবিধ অনুষঙ্গ’ গ্রন্থের আলোচনায় ড. আনোয়ারা আলম বলেন, ছোট ছোট বাক্যে সুরের মতো, গানের মতো, কাব্যিক ছন্দে লেখা গ্রন্থটিতে লোকসংগীতের অতীত থেকে বর্তমান প্রায় সবকিছুই গবেষণার মতো তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর লেখার ধরনটাও খুবই আকষনীয়। যারা গানের চর্চা করেন তাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
প্রফেসর রীতা দত্ত ‘আমার রচিত যত গান’ সম্পর্কে আলোচনায় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে গান পরিবেশনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গানের বইটিতে আধুনিক ও লোকসংগীত–এর একটা মেলবন্ধন দেখা যায়। যার মধ্যে আধ্যাত্মিকতাও একীভূত। ইকবাল হায়দারের শিল্পী ও লেখক দুই সত্তা একীভূত। কবি জসীম উদ্দিন খান বলেন, ইকবাল হায়দার সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পী। তিনি সুরের ধারায় মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। লেখক হিসেবেও সফলতার পরিচয় দিচ্ছেন। শিল্পী সত্তার পাশাপাশি সৃষ্টিকর্মেও তিনি অবদান রেখে চলেছেন। অনুষ্ঠানে তিনটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একই সাথে চট্টগ্রাম একাডেমির পক্ষ থেকে শিল্পী ইকবাল হায়দারকে সুহৃদ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁকে ক্রেস্ট তুলে দেন একাডেমির মহাপরিচালকসহ অতিথিবৃন্দ। লেখক তাঁর তিনটি গ্রন্থ উপস্থিত সমাবেশকে উপহারস্বরূপ বিতরণ করেন।