সব ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার কথা জানিয়েছেন হাইকোর্ট। ফটিকছড়ির এক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থিতার বৈধতা প্রশ্নে এক রায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এমন পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ। খবর বাংলানিউজের।
ফটিকছড়ি উপজেলার বখতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ফারুক উল আজম। এ প্রার্থী আরেক জনের ব্যাংক ঋণের জামিনদার হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিএবি) প্রতিবেদনে ঋণখেলাপি হিসেবে তার নাম আসে। যে কারণে গত বছরের ২১ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারুকুল আজমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। মনোনয়নপত্র ফিরে পেতে ফারুক উল আজম চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আপিল করেন। আপিল খারিজ হলে তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফারুক উল আজম। হাইকোর্ট গত বছরের ৩১ অক্টোবর রুল জারির পাশাপাশি রিট আবেদনকারী প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে তার মনোনয়নপত্র নিতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী এস এম সোলায়মান হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার আদালত গত বছর ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি ওই ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে স্থগিতাদেশ দিয়ে সোলায়মানের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। গত ৬ মার্চ আপিল বিভাগ চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টকে দ্রুত রুলটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। ওই রুলের শুনানি শেষে গতকাল পর্যবেক্ষণসহ রায় দিলেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম ও মো. জাহেদ উল আনোয়ার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। আইনজীবী জাহেদ উল আনোয়ার বলেন, আদালত রায়ে ফারুক উল আজমের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছেন। সেসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর আইনানুযায়ী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে।
আইনজীবী জাহেদ উল আনোয়ার আরো বলেন, আদালত হলফনামার বিষয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ২৬(৩) ধারা অনুযায়ী প্রার্থীদের হলফনামা দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২০১৬ সালে প্রণীত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংশোধিত বিধিমালায় প্রত্যয়নের কথা আছে। মনোনয়নপত্রের ফরমের সঙ্গে একটা প্রত্যয়নপত্র দিলেই এখন হয়। তাই আদালত বলেছেন, যেহেতু আইনের আলোকে বিধিমালা হয়, সেহেতু আইনের প্রাধান্য বিধিমালার ওপরে। সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা বাধ্যতামূলক।’
নির্বাচন কমিশনকে পরবর্তী সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রে হলফনামা ফরমের বিষয়ে ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।