থাইল্যান্ডে আঞ্চলিক জোট বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে উপদেষ্টার বৈঠকের প্রসঙ্গে টেনে করা এক প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি। নভেম্বরে বিমসটেকের এ সম্মেলনের সূচি নির্ধারণ হতে পারে বলে তুলে ধরেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিউ ইয়র্কে পৌঁছার আগের দিন প্রধানমন্ত্রী মোদী ফিরে আসায় জাতিসংঘের সদরদপ্তরে তাদের দেখা হয়নি। অক্টোবরে সামোয়াতে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনেও যাবেন না দুই নেতা। ওই সময়ে ব্রিকস সম্মেলনে যাবেন নরেন্দ্র মোদী। আমরা কথা বলেছি হয়ত আগামী মাসে (থাইল্যান্ডে) বিমসটেকের সামিট যখন হবে, প্রত্যাশিত, এখনও তারিখ নির্ধারণ হয়নি, সম্ভাবনা আছে নভেম্বরেই হবে। সেখানে হয়ত দুপক্ষের মধ্যে আলাপ–আলোচনা হতে পারে। এদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন বাদ রেখে সম্পর্কোন্নয়নের কোনো বার্তা পাকিস্তানকে দেওয়া হয়নি। খবর বিডিনিউজের।
এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমরা যেটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা করি যে, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। এবং উভয় পক্ষ একমত হয়েছি যে, আমাদের পরস্পরের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, নিজেদের স্বার্থে। এটাতে বাংলাদেশের স্বার্থ আছে, ভারতের স্বার্থও আছে। কাজেই আমরা এই লাইনেই কথাবার্তা বলেছি। সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এখনও না হলেও অন্যান্য পর্যায়ে আলোচনা চলমান রাখার বিষয়ে কথা হওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপন এবং পারস্পরিক যে কনসার্নগুলো আছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা না হওয়ার কথা এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আলোচনায় ভিসা নিরাপত্তা : বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভিসা নিয়ে একটু কথাবার্তা বলেছি। ভিসা যারা দিচ্ছেন, তাদের অনেকে তো ভারতে চলে গেছেন। তাদের সুবিধাটা পুরোপুরি তৈরি হয়নি। আমরা আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে এটা চালু হয়ে যাবে। এখন শুধু স্বাস্থ্যবিষয়ক ভিসা দেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত তারা ভিসা দেওয়া চালু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, খুব বেশিদিন হয়ত সময় লাগবে না।
নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথাবার্তা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে আমরা বলেছি যে, প্রথম দিকে তো সত্যিকার অর্থে সরকার ছিল না কয়েকদিন। যদিও টেকনিক্যালি সরকার ছিল, রাষ্ট্রপতি তো সরকারের মূল ব্যক্তি, তার পক্ষ থেকে তো অনেক কিছু করা হয়। তারপরে পুলিশ ছিল না, প্রথমে অনেক দিন। এগুলো কারণে নিরাপত্তার কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা আমরা স্বাভাবিকভাবে স্বীকার করি সবখানে। কিন্তু সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, পুলিশও ফিরে আসছে অনেকাংশে এবং সেনাবাহিনী এখনও আছে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কিন্তু অনেকটা উন্নতি হয়েছে এবং ইদানীং বিদেশি কারও কাছ থেকে অভিযোগ আমি পাইনি। আমার সাথে যারা দেখা করতে এসেছে, তাদেরকে আমরা এটা বলেছি। তাদের (ভারতের) সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
অন্যান্য দেশের ভিসার ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, কবে তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করবে, এটা আমি বলতে পারব না। ওরা বলতে পারবে। আজকে যেমন আমার সাথে ইতালির রাষ্ট্রদূতের কথা হয়েছে, উনার এখানে সম্ভবত ৬০ হাজার পাসপোর্ট আটকে আছে। তিনি নিজেও এটার জন্য লজ্জিত আর কি। উনি আমাকে বলেছেন যে, তারা অতিরিক্ত অফিসার নিয়োগ করেছে ইতোমধ্যে। তারা কিছুদিনের মধ্যে আসবে। যাতে করে জমে থাকা কাজগুলো সমাধা করতে পারে। পৃথকভাবে এই কাজটা করতে চায়, এই ব্যাপারটি তারা বলেছে।
যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তাদেরকে ভিসা কার্যক্রমে গতি আনতে বলার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, যাতে করে এখানে যারা সমস্যায় আছে, তারা মুক্তি পায়। তবে একটা ব্যাপার হলো, ভিসাটা একেবারে সার্বভৌম একটা কাজ। কাকে ভিসা দেবে, না দেবে বা কতটুকু দেবে, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করতে পারি এবং আমরা সেটা করে যাচ্ছি।
ভালো সম্পর্কের চেষ্টা করব, একাত্তরও থাকবে : মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন বাদ রেখে সম্পর্কোন্নয়নের কোনো বার্তা পাকিস্তানকে দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকও হয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন। ওই বৈঠকে একাত্তরে ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উঠেছে কিনা, এমন প্রশ্নে গতকাল তৌহিদ হোসেন বলেন, সৌজন্য সাক্ষাতে কঠিন বিষয়গুলো তোলা হয় না। যখন আলোচনার টেবিলে বসব, তখন এই বিষয় আলোচনা তুলব।
একাত্তরকে বাদ রেখে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এগিয়ে নেওয়া হবে কিনা, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, না। আমরা মোটেই তাদেরকে এ প্রসঙ্গে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করিনি যে, একাত্তরকে বাদ দিয়ে আমরা ভালো সম্পর্ক রাখব। ভালো সম্পর্ক নিশ্চয় করার চেষ্টা করব, একাত্তরও থাকবে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন। ওই প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নে তৌহিদ বলেন, ৫২ বছরের একটা বিষয়, সেটা কাল সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। তবে যখন আমরা আলোচনার টেবিলে বসব, তখন ইস্যুটি থাকতে হবে। পাকিস্তানের হাইকমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, এ ধরনের কাছাকাছি বক্তব্য তাদের নেতাদের কাছ থেকে আগেও এসেছে।