ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসায় বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত ও চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়নে সহযোগিতা কামনা । সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ট্রাম্পকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

| বৃহস্পতিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এ বৈঠক হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার যাত্রায় মুহাম্মদ ইউনূসের অগ্রণী ভূমিকা তুলে ধরে তার ১৪ মাসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।

বৈঠকে আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন, রাজস্ব ও ব্যাংক খাত সংস্কার, চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ এবং এশিয়াজুড়ে তরুণদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অংশগ্রহণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তারা পাচার হওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধারের বিষয়টিও আলোচনায় তোলেন।

মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ইতিহাসের এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশ্বব্যাংকের দৃঢ় সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন ও সংস্কারে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চান। তিনি বলেন, এ বন্দরের উন্নয়ন লক্ষাধিক উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াবে।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি। আসুন আমরা একসঙ্গে উন্নয়ন করি। তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটানের মতো ভৌগোলিকভাবে স্থলবেষ্টিত দেশ এবং ভারতের সাতটি উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যও একটি আধুনিকায়িত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাত সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, টেকসই ও উচ্চ প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করতে এসব সংস্কার অপরিহার্য।

বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাম্পকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সুবিধাজনক সময়ে তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ নেতার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় মার্কিন বিশেষ দূত সার্জিও গরের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।

প্রধান উপদেষ্টা গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না। তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়্ত তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের মিছিল, ঢাকায় ২৪৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার