পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত স্বাধীন। শ্রমিক–কর্মচারীরাই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আর ইউনূসকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে সংবাদ নয় বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রকাশিত একটি বিবৃতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন পোস্টে নিউজ নয়, সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কোনো অফিস ফার্মের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়েছে। রাজধানীর বেইলী রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল সকালে ১৪টি দেশের অনিবাসী রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী। খবর বাসসের।
হাছান বলেন, এ রকম বিজ্ঞাপন আগেও ছাপানো হয়েছে। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের প্রতি যথাযথ সম্মান এবং শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই যে, বাংলাদেশে বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ বিধায় সরকারি দলের অনেককে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়, জেলেও যায় এবং ইউনূস সাহেবের এই মামলায় সরকার কোনো পক্ষ না। ড. ইউনুস সাহেবের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক–কর্মচারীরা বলছে, তারাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় রায় হয়েছে। এখানে সরকার কোনো পক্ষ নয়।
অনিবাসী রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাত প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন–অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ ১০ বছর আগে এখানে এসেছিলেন। দু’একজন বলেছেন তারা ১২ বছর আগে এখানে এসেছিলেন, আবার ২০২০ সালেও এসেছিলেন। তারা বলেন, আগের এবং আজকের মধ্যে অনেক পার্থক্য, বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন–অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যেকটা দেশই বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এবং অনেকেই বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কয়েকটি দেশ আমাদের দক্ষ জনশক্তি আমদানির আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। আফ্রিকায় কৃষি খাতেও এই সুযোগ রয়েছে। বোতসোয়ানা, কম্বোডিয়া, চেক রিপাবলিক, গাম্বিয়া, হাঙ্গেরি, জ্যামাইকা, লুক্সেমবার্গ, মঙ্গোলিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়া, পেরু, স্লোভাক রিপাবলিক, স্লোভেনিয়া, উরুগুয়ে ও ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দ সৌজন্য সাক্ষাতে যোগ দেন।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই সমাধান : পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে ও বিমসটেক মহাসচিব ইন্দ্র মনি পাণ্ডে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে তারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সুইডিশ রাষ্ট্রদূত লিন্ডের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান সবুজ শক্তি ও বর্জ্য থেকে শক্তি আহরণে সহযোগিতা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে সুইডেনের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনায় মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে জানান, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকারসহ নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। সুইডেন এ বিষয়ে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে জানায়।
১৯৯৭ সালে গঠিত বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এই সাত দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা সংগঠন বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো–অপারেশনের (বিমসটেক) নতুন সেক্রেটারি জেনারেল ইন্দ্র মনি পাণ্ডের সঙ্গে বৈঠকে বহুপাক্ষিক আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসার নিয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান।
ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ, আঞ্চলিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, যোগাযোগ অবকাঠামোসহ নানা বিষয়ের পাশাপাশি চলতি বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকও আলোচনায় স্থান পায়।