স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, দেশের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে জেলা সদর এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমবে। যদি গ্রাম ইউনিয়ন–উপজেলা পর্যায়ে রোগীদের বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো সেই রোগীটাই বড় হাসপাতালে আসবে যার সত্যি সত্যি এখানে চিকিৎসা দরকার। যেটাকে বলা হয় রেফারাল সিস্টেম। এই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ২ হাজার ২০০ বেডের। কিন্তু রোগী থাকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি।
গতকাল সকালে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, হাসপাতালে রোগীদের পক্ষ থেকে নানা ধরণের অভিযোগ আছে। তবে পরিদর্শন করতে করতে চিকিৎসক–কর্মকর্তাদের সঙ্গে যেটা মতবিনিময় হলো তাতে আমি বলব, এখানে সরকারেরও যথেষ্ট দায়বদ্ধতা আছে। এখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর যেসব আউটসোর্সিং কর্মী নেওয়া হয়, গত তিন–চার মাস যাবত তাদের বেতন নেই। বেশকিছু সমস্যা যাওয়ায় এখনো তাদের বেতনভাতার বিষয়টি পাশ হয়নি। সেটি পাশ হলেই সরকারিভাবে তাদের জন্য পুনরায় বেতন–ভাতা বরাদ্দ হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো আর বিনা পয়সায় তাদের মাসের পর মাস রাখতে পারবে না। তবে আমরা বলছি এভাবে তাদের বেতনভাতা বন্ধ হওয়া উচিত হয়নি। প্রক্রিয়াটি অনেক আগ থেকেই এমন হওয়া উচিত ছিল যা বরাদ্দ দেওয়ার কথা সেটি যেন সরকার সারা বছর দেয়।
তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু ছোট ছোট কমিউনিটি ক্লিনিক হয়েছে। কিন্তু সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক নেই। উপজেলা–সদর–জেলা হাসপাতালগুলোতেও বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এটা আছে তো ওটা নেই, ওটা আছে তো এটা নেই। যে কারণে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেননা চিকিৎসাসেবা একটি যৌথ কাজ। চিকিৎসক লাগে, টেকনিশিয়ান লাগে, যন্ত্র লাগে। সেজন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আমাদের অনেক ছেলে মেয়ে আহত হয়েছেন, অনেকে শহীদ হয়েছেন। আমি যখন বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি, তখন দেখেছি যারা আহত হয়েছেন তারা কেউ কেউ দুই চোখই হারিয়েছেন। এই পৃথিবীটাকে তারা আর দেখতে পারবেন না। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য চীন, নেপাল, ফ্রান্স থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। থাইল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। ৫০ জনের চোখের কর্নিয়া নেপাল তৈরি করে রেখেছে, যাদের কর্নিয়া স্থাপন প্রয়োজন হবে তাদের জন্য। ইতোমধ্যে দুইজনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেক শ্রেণী পেশার মানুষ আছেন। অনেকে হাত হারিয়েছেন, অনেকে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। আহতদের অনেকে নানা ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এটা শুধু মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। এটা আমাদের পুরো জাতির বিষয়।
কোভিডকালীন ডাক্তারদের অবদানের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, কোভিডকালীন পরিস্থিতিতে ডাক্তাররা যে সেবাটা দিয়েছেন, অনেক ডাক্তারও কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আমরা তাদের স্মরণ করি না। কিন্তু তারা অনেক দিয়েছেন জাতির জন্য। বৈষম্যের যে কথা উঠে এসেছে সেটা নিয়ে আমি বলব শুধু ডাক্তাররা নন, নার্সরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। অনেকে এসে আমাকে বলেছেন ১৭ বছর ধরে একই পদে চাকরি করছেন। এটাতো হওয়া উচিত না। একটা মানুষের যদি কর্মস্পৃহা জাগাতে হয় তাহলে তাকে পথটা দেখিয়ে দিতে হবে।
এ সময় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা, চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।