বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, হংকং এর সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও দানবীর, সীতাকুণ্ডের কৃতীসন্তান ইউছুপ আলী (৫৬) আর নেই। গত ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হংকংয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা গেছেন। দীর্ঘদিন তিনি ডায়াবেটিসপ্রসূত কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। আমাদের সমাজে মানবতাবাদী ও সমাজহিতৈষী এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা নীরবে আত্মমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখেন, কোনো প্রচারণার ধার ধারেন না, জনহিতকর বিভিন্ন কাজ করেই আত্মপ্রসাদ লাভ করেন, হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে ছায়ার মতো কাজ করেন মোহাম্মদ ইউছুপ আলী তাদেরই একজন। নিজের প্রচেষ্টায়, পরিশ্রম, সাধনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ইউছুপ আলী শেকড় থেকে শিখরে অবস্থান করে নিয়েছিলেন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
শিক্ষিত তরুণসমাজের জন্যে ইউছুপ আলী ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তরুণপ্রজন্ম তাঁকে অনুসরণ করতে পারে। পারিবারিক প্রতিকূল পরিবেশ ও আর্থিক অভাব-অনটন কোনো মানুষের জীবনে যে বাধা হতে পারে না-ইউছুপ আলী-ই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইউছুপ আলী একজন সজ্জন ও দয়ালু মানুষ। এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম মমত্ববোধ ও ভালোবাসা। গরীব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের তিনি অকৃত্রিম বন্ধু। পরোপকারী ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে নিজগ্রামে তার যথেষ্ট খ্যাতি ও সুনাম আছে। সহজ-সরল ও অমায়িক ব্যবহারের কারণে দেশ-বিদেশের বন্ধুমহলে তিনি ছিলেন বেশ সমাদৃত। ছল-চাতুরি ও ভণ্ডামির বিপরীতে ছিল তাঁর শক্তিশালী অবস্থান। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন সর্বদা আপোসহীন। সততা ও নিষ্ঠার সাথে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন বলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা ও সুনাম অর্জন করেছেন। উত্তর সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান-অনুদানে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন ইউছুপ আলী। এছাড়া গরীব ছেলেমেয়েদের বিয়েশাদি ও লেখাপড়ার জন্যে দীর্ঘদিনধরে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছিলেন। উত্তর সীতাকুণ্ডে কম ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান আছে- যা তাঁর অর্থানুকূল্যে আসেনি। বিশেষ করে বাড়বকুণ্ডের দক্ষিণ নডালিয়া ও বারৈয়াঢালার ফেদাইনগরে ১০শতক করে জমি কিনে সেখানে তিনি দুটি মসজিদ-ঘর নিমার্ণ করে দেন। গোপ্তাখালি জামালিয়া দরবার শরীফ কমপ্লেঙ, দোয়াজিপাড়া মদিনাতুন উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা, দক্ষিণ ইদিলপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এলাকার অসংখ্য সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তিনি আর্থিক অনুদান দিয়েছেন।
ইউছুপ আলী’র স্থায়ী নিবাস চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পূর্বমুরাদপুর গ্রামের দোয়াজীপাড়ায়। মা’র নাম মরহুমা মনজুরা বেগম ও বাবা মরহুম রেজওয়ান উল্লাহ। তিনি ১৯৯০সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ তম ব্যাচে ১৯৮৬ শিক্ষাবর্ষে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে অনার্স এবং ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে মাস্টার্স শেষ করেন । পড়ালেখা শেষে ১৯৯১ সালের মে মাসে চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিতে নিজ কর্মদক্ষতার গুণে মাত্র দুবছরের মাথায় পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে কেডিএস গ্রুপের হংকং অফিসে যোগদানের মাধ্যমে হংকং এ বসবাস করে আসছেন।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দু’কন্যা ও একপুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী মিসেস শাহীন আরা বেগম চট্টগ্রাম কলেজ থেকে রাজনীতিবিজ্ঞানে অনার্স এবং মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি গৃহকর্মের পাশাপাশি স্বামীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ই্উছুপ আলী হংকং এ সফলতার সাথে ব্যবসা করে আসছিলেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন। ২০১৮ সালে সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্যে ইউছুপ আলীকে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করেছিল।