ইউক্রেন সংঘাত কেমন ভূমিকা রাখবে তুরস্কের ড্রোন

| মঙ্গলবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়ার সাথে যেকোনো সময় যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে সম্ভাব্য লড়াইয়ের জন্য তৈরি করে তুলছে নানা দেশ। তার মধ্যে আছে তুরস্ক। তুরস্কের তৈরি ডজন ডজন ড্রোন ইতোমধ্যে ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, আংকারা ও কিয়েভের মধ্যে একটি নতুন চুক্তি হয়েছে; যার ফলে ইউক্রেনের কারখানাতেই এখন তৈরি হবে তুরস্কের ডিজাইন করা ড্রোন। বিশ্বে যখন ড্রোন যুদ্ধের গুরুত্ব ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে তখন রাশিয়া-ইউক্রেন সম্ভাব্য সংঘাতও এর বাইরে থাকতে পারছে না। খবর বিবিসি বাংলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন
সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের পটভূমিতে অনেকেই নজর রাখছেন কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণের দেশ তুরস্ক ও তাদের তৈরি করা ড্রোনের দিকে। শুধু ইউক্রেন নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা সংঘাতে তুরস্কের তৈরি ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তুরস্ক নেটোর সদস্য দেশ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর এই সামরিক কোয়ালিশনের একমাত্র মুসলিম সদস্য। তুরস্কের সেনাবাহিনী হচ্ছে নেটো জোটের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। সংখ্যায় তার স্থান যুক্তরাষ্ট্রের পর। তুরস্কের হাতে আছে নেটো মিত্রদের মতো সামরিক প্রযুক্তি।
তুরস্কে বসবাসরত স্বাধীন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, আংকারার সরকার গত ২০ বছরে একটা শক্তিশালী ড্রোন বাহিনী গড়ে তুলেছে। তারা তুরস্কের ভেতরে ও বাইরে, কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী পিকেকের বিরুদ্ধে ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকেই নিরাপত্তা কার্যক্রমে ড্রোন ব্যবহার করে আসছে। দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পকে উন্নত করার জন্য ড্রোন প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে-উৎপাদন ক্ষমতা ও কার্যক্রম পরিচালনা, উভয় দিক থেকেই। এক্ষেত্রে তুরস্ক এই অঞ্চলে এক নজিরবিহীন অবস্থানে আছে। ব্যতিক্রম শুধু ইসরায়েল।
ইউএভি (আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল) বা মনুষ্যবিহীন আকাশ যান, যাকে চলতি কথায় বলা হচ্ছে ড্রোন, তুরস্ক তার প্রধান উৎপাদনকারী হচ্ছে দুটি। বায়কার ডিফেন্স নামের প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করে বায়রাক্টার টিবিটু এবং বায়রাক্টার আকিনচি নামে দুটি ড্রোন। এগুলোর ব্যাপক চাহিদা আছে। অন্য আরেকটি বড় উৎপাদনকারী হচ্ছে টার্কিশ এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ। এদের তৈরি ড্রোনের নাম টিএআই আংকা ও টিএআই আকসুংগুর।
আরদা মেভুতোগলুর মতে, তুরস্কের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো ১৫০টিরও বেশি এ রকম ড্রোন ব্যবহার করছে। এছাড়া তারা অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির পর্যবেক্ষণ ও কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করছে।
তুরস্ক ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনের কাছে অনেকগুলো বায়রাক্টার টিবিটু অস্ত্রবাহী ড্রোন বিক্রি করেছে। ইউক্রেনও চায় একদিন তুরস্কের মতো নেটোর সদস্য হতে। কিন্তু এখন তাদের একদিকে যেমন পূর্বাঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের তৈরি হতে হচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য। এর মধ্যে ৩ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ এরদোয়ান ইউক্রেন সফরে যান ও ড্রোন বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি করেন। এর ফলে ইউক্রেনেই ড্রোন নির্মিত হবে।
গত অক্টোবরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী একটি ভিডিও শেয়ার করে, যাতে দেখা যায় তুরস্কের তৈরি ড্রোন দিয়ে একটি ডি-৩০ হাউইটজার কামান ধ্বংস করা হচ্ছে, যা ইউক্রেনে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা ব্যবহার করে। রুশ নির্মিত আর্টিলারি সরঞ্জাম ধ্বংসের এই দাবির পর রাশিয়া এর সমালোচনা করে এবং ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে তুরস্ককে হুঁশিয়ারি দেয়, তাদের তৈরি ড্রোন ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি তৈরি করছে।
আংকারা ইতোমধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের কাছে ড্রোন বিক্রির ফলে ব্যাপারটা এখন জটিল হয়ে পড়েছে। রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই জটিল। সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তা আরো জটিল হয়েছে।
ইউক্রেনে কতগুলো বায়রাক্টার টিবিটু ড্রোন আছে তা স্পষ্ট নয়। তবে আরদা মোভুতোগলু বলছেন, ইউক্রেনের জন্য ডনবাস অঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে টিবিটু ড্রোন কার্যকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।
এই ড্রোনে একটি উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরা আছে। তার সাথে আছে ডাটা-লিংক সিস্টেম এবং দুই থেকে চারটি পর্যন্ত বিস্ফোরক, যা প্রিসিশন-গাইডেড অর্থাৎ উড়ে গিয়ে নির্ভুল নিশানায় লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। এর ফলে এটা দিয়ে আগে থেকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা যায়। তারপর দিক নির্ণয় করে চলতে সক্ষম বোমা দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানা যায়।
মেভলুতোগলু বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে গেলে এসব ড্রোন কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সংখ্যা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের চেয়ে অনেক গুণ বেশি উন্নত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশগামী কর্মীরা যেন প্রতারিত না হয়, ব্যবস্থা নিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধএবার চোরাচালান আইনের ধারায় চার্জগঠন ২ মার্চ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু