ইউক্রেনে সর্বাত্মক রুশ অভিযান

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল মাস খানেক আগেই। সামরিক মহড়ার কথা বলে বেলারুশে রুশ সেনার প্রবেশের পরেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়া। অবশেষে ইউক্রেনে গতকাল স্থানীয় সময় ভোর থেকে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। এর মাধ্যমে ইউরোপে আবার ফিরে এলো যুদ্ধ।
ইউক্রেনের তিনদিক ঘিরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে রুশ সেনারা। পশ্চিমা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সাগর, স্থলভাগ এবং আকাশপথে রাশিয়ার একের পর এক হামলার মুখে ইউক্রেইনের সেনাবাহিনী পুরোদস্তুর প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানেই থেকেছে, চালিয়ে গেছে পাল্টা প্রতিরোধ। সকালেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের উপর হামলার ঘোষণা করেন। আর তার পরেই মুহুর্মুহ বিস্ফোরণের শব্দ আর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে ইউক্রেনের আকাশ। বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ মিশেছে বাতাসে। আকাশে চলে যুদ্ধবিমানের নিরন্তর আনাগোনা। রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে রাজধানী কিয়েভে। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি নিয়ে শহর ছাড়ার মরিয়া চেষ্টা করেছেন হাজার হাজার মানুষ।
যুদ্ধের প্রথম দিনই হতাহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে গেছে। রাশিয়া একটি বিবৃতিতে দাবি করেছে, ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ৭৪টি সামরিক লক্ষ্যকে ধ্বংস করে ফেলেছে তারা। এর মধ্যে ১১টি বিমানঘাঁটি, তিনটি কমান্ড পোস্ট, একটি নৌঘাঁটি, এস-৩০০ ও বিইউকে-এমওয়ান মিসাইল সিস্টেমের ১৮ রেডার স্টেশন রয়েছে এসব স্থাপনার মধ্যে। একটি সামরিক হেলিকপ্টার এবং চারটি ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার খবরও জানিয়েছে তারা। রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এবং কামানের গোলায় নিহত হয়েছে ইউক্রেনের অন্তত ৪০ জন সেনা। ইউক্রেনও তাদের ৪০ সেনা মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে দাবি করেছে, তাদের প্রত্যাঘাতে রুশ বাহিনীর অন্তত ৫০ সেনা মারা গেছে। কমপক্ষে ৬ জন রুশ সেনাকে বন্দি করেছে। কয়েকটি রুশ হেলিকপ্টারকে ভূপাতিত করেছে। ধ্বংস করেছে ডজনখানেক ট্যাংক। তবে নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে এ সব দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তবে অনেক বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানিযেছে। ইউক্রেনের রাজধানী থেকে বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস রাতে সর্বশেষ খবরে জানিয়েছেন, রুশ সৈন্যরা রাজধানী কিয়েভ থেকে ২০ মাইল দূরে আন্তোনভ বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিমান ঘাঁটির কাছাকাছি এলাকা থেকে করা মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএনের লাইভ রিপোটিং চলার সময় রুশ প্যারাট্রুপারদের চোখে পড়ছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা যা ধারনা করেছিলেন রুশ সৈন্যরা তা চেয়েও দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। পল অ্যাডামস আরো বলেন, কিয়েভের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এখন রুশ প্যারাট্রুপাররা হয়ত অগ্রসরমান রুশ সাঁজোয়া বাহিনীর জন্য অপেক্ষা করবে নতুবা ওই ঘাঁটি থেকে নিজেরাই কিয়েভের ওপর হামলা শুরু করবে। ব্যাপারটি যে কোনো সময় ঘটতে পারে। কিয়েভে এখন কারফিউ। রুশ বিমান হামলার ভয়ে মাঝে মধ্যে সাইরেন বাজছে। মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে। অনেকে পাতাল রেল স্টেশনগুলোতে গিয়ে বসে আছেন।
রুশ বাহিনী তাদের চেরনোবিল পরমাণু শক্তিকেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘রাশিয়ার দখলদার বাহিনীর চেরনোবিল (পরমাণু শক্তিকেন্দ্র) দখলের চেষ্টা। ১৯৮৬ সালের দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি আটকাতে আমাদের প্রতিরোধ বাহিনী তাদের জীবন উৎসর্গ করছে। এটা পুরো ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা।’ এদিকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টার বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চরনোবিল পরমাণু শক্তি কেন্দ্র রুশ বাহিনী দখল করে নিয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে ইউক্রেনের এই চেরোনোবিল পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণে নিহত হন অন্তত ৩২ জন মানুষ।
ইউক্রেনের দক্ষিণ খেরসনের বিস্তীর্ণ এলাকা আর কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে নেই। জল-স্থল-অন্তরীক্ষে রাশিয়ার আক্রমণের জেরে এই সমস্ত অংশ এখন তাদের দখলে বলে খবর। রাশিয়ার সেনা বাহিনী গোস্টোমেল বিমানঘাঁটি দখলের পর কিয়েভের উত্তর উপকণ্ঠে একটি বিমান ঘাঁটির দখল নিয়ে শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ। দুই পক্ষের প্রবল গোলাগুলি চলে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, শুধু ক্ষেপনাস্ত্র বর্ষণ বা বিমানের শব্দ নয়, এই গর্জন আসলে সভ্যতা ধ্বংসের চেষ্টা। যার জন্য দায়ী থাকবে রাশিয়া। অন্য দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জানান, পূর্ব ইউক্রেনের নাগরিকের সুরক্ষার জন্য এই সামরিক অভিযানের প্রয়োজন ছিল।
অপর এক খবরে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর নেটো প্রতিরক্ষার নতুন পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে। নেটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইউক্রেনে নেটোর সেনা পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। এক সংবাদ সম্মেলনে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘নেটো যুদ্ধের জন্য কোনও সেনা আদৌ ইউক্রেনে পাঠায়নি। সেখানে কোনও নেটো সেনা নেই; সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা কিংবা অভিপ্রায়ও আমাদের নেই।
তেলের ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়াল : ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ষোষণার পর বিশ্ব বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মত ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে। সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রপ্তানি করে রাশিয়া। সেইসঙ্গে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়াতেই উত্তোলন করা হয়। আর ওই গাসের ওপর ইউরোপ অনেকটা নির্ভরশীল। খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৫ সাংগঠনিক তদারকি কমিটি এক মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি
পরবর্তী নিবন্ধদোষীদের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন ও র‌্যালি