ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরলো রাশিয়া

মূল্য দেবে লাখো মানুষ : জাতিসংঘ প্রধান

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৮ জুলাই, ২০২৩ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে দেশটির শস্য রপ্তানির ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে সরল রাশিয়া। গতকাল সোমবার ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আর মেয়াদ না বাড়ানোর বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ক্রাইমিয়া সেতুতে হামলায় দুজন নিহত এবং তাদের শিশু কন্যা আহত হয়। ইউক্রেন ওই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে যাওয়ার লাখো মানুষ মূল্য দেবে। খবর বিডিনিউজের।

রাশিয়ার জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি (এনএকে) গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্রাইমিয়া সেতু ইউক্রেনের ড্রোন হামলার লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে। ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড সংযোগকারী সেতুটিতে স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে ওই হামলা হয়। আইপ্রয়োগকারী সংস্থা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে জানিয়ে এনএকে থেকে আরো বলা হয়, এই সন্ত্রাসী হামলায় ক্রাইমিয়া সেতুর সড়ক অংশের ক্ষতি হয়েছে। দুজন পূর্ণবয়স্ক নিহত হয়েছেন এবং এক শিশু আহত হয়েছে।

২০১৪ সালের যুদ্ধে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া। ক্রাইমিয়া সেতুতে হামলার সঙ্গে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিত করার কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, প্রকৃতপক্ষে, কৃষ্ণ সাগর চুক্তি মেয়াদ আজই শেষ হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এই কৃষ্ণ সাগর চুক্তিতে রাশিয়া সম্পর্কিত অংশ এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি, তাই এর বাস্তবায়ন বাতিল করা হয়েছে।

মস্কো চুক্তির বিপক্ষে নিজের অবস্থানের বিষয়টি তুরস্ক, ইউক্রেন এবং জাতিসংঘকে অবহিত করেছে বলেও জানান রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর দেশটি থেকে শস্য রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, রাশিয়া প্রথমেই কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলোর দখল নিয়ে নেয়।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন থেকে পণ্যের যোগান বন্ধ হয়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। লাফিয়ে লাফিয়ে শস্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সারা বিশ্বে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। অন্যদিকে, ইউক্রেনের গুদামগুলোতে টন টন শস্য পড়ে নষ্ট হতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির বিষয়ে তিন পক্ষের মধ্যে গত বছর একটি চুক্তি হয়।

মূল্য দেবে লাখো মানুষ : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সব জায়গাতেই মানুষ ভুক্তভোগী হবে। তিনি বলেন, বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে আছে। আরও বহু মানুষ জীবনযাত্রা ব্যয় সংকটে আছে। রাশিয়ার সিদ্ধান্তের ‘মূল্য দেবে’ এইসব মানুষেরা।

গতকাল শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আর তা না বাড়ানোর বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘ মহাসচিব এই সিদ্ধান্তে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা গতকাল রাতে। বিবিসি জানায়, এ মেয়াদ আর না বাড়ার সিদ্ধান্তে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের (ডব্লিউটিও) প্রধানও। তিনি এক টুইটে লেখেন, কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাবার, গবাদি পশু খাদ্য এবং সার বাণিজ্য বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে যে, গরিব মানুষেরা আর গরিব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে।

কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তি ভেঙে পড়ার প্রতিক্রিয়ায় একই কথা বলেছেন খাদ্য বাণিজ্য দেখভালকারী আন্তর্জাতিক শস্য পরিষদের প্রধান কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গমের দাম বেড়ে গেলে তা বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভালো হবে না। কারণ বাড়তে থাকা দাম পুষিয়ে দেওয়ার মতো অর্থ তাদের থাকবে না।

শস্যচুক্তিটি হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেন প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টন শস্য এবং অন্যান্য খাবার পরিবহন করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের সড়কবাতি জ্বালিয়ে ১৪৭০ জন পেলেন সাড়ে ১২ লাখ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধমহিলা আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে লোহাগাড়ার সাজেদা সুরাত