ইউক্রেনে দূর–পাল্লার টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর চিন্তা–ভাবনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি ইউক্রেনে টমাহক পাঠাবেন কি–না। খবর বিডিনিউজের।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, দেখা যাক… আমি পাঠাতে পারি। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র হবে আগ্রাসনের এক নতুন ধাপ। ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তার ফোনালাপের পর। ওই আলাপে জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা জোরদারে শক্তিশালী সামরিক সহায়তা চান। এর আগে মস্কো যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছিল, ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিলে তা যুদ্ধকে আরও তীব্র করবে এবং ওয়াশিংটন–মস্কো সম্পর্কের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার, যা ইউক্রেনের হাতে থাকলে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো পর্যন্ত হামলার ক্ষমতা পাবে দেশটি। ট্রাম্প বলেন, আমি হয়ত রাশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব। আমি তাদের বলতে পারি, যদি যুদ্ধের অবসান না হয়, তাহলে আমরা টমাহক পাঠাতে পারি আবার নাও পারি। তারা কি চায় টমাহক তাদের দিকে উড়ুক? আমার মনে হয় না। রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, টমাহকের বিষয়টি রাশিয়ার জন্য চরম উদ্বেগের। এখন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল, সব দিক থেকেই উত্তেজনা বাড়ছে, মন্তব্য করেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে পেসকভ বলেছিলেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের গতিপথ বদলাতে পারবে না। তবে রোববার তিনি বলেন, যদি ইউক্রেন থেকে টমাহক রাশিয়ার দিকে ছোড়া হয়, তখন মস্কো জানতেও পারবে না সেটিতে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে কি না। রাশিয়া তখন কী ভাববে, কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? সোমবার সকালে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ পেসকভের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, রাশিয়া কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? খুব সহজ টমাহক পাঠানোর সিদ্ধান্ত সবার জন্যই ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
বিশেষ করে ট্রাম্পের জন্য। মেদভেদেভ সামপ্রতিক বছরগুলোতে ক্রমেই আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রায়ই ক্রেমলিনের চেয়েও তীব্র ভাষায় মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তার আগেও অনলাইনে বাকযুদ্ধ হয়েছে। অগাস্টে মেদভেদেভের এক মন্তব্যের জবাবে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার হামলা শুরুর পর থেকেই ইউক্রেন একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চেয়ে এসেছে। সামপ্রতিক ফোনালাপে ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো, বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। শীত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে। এতে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। গত মাসে ইউক্রেনে ট্রাম্পের বিশেষ দূত কিথ কেলগ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার ভেতরে গভীর পর্যন্ত হামলার অনুমোদন দিয়েছেন। ফঙ নিউজকে তিনি বলেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে এখন আর কোনও জায়গাই নিরাপদ আশ্রয় নয়।