ইউএসটিসি হাসপাতালে অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

থানায় মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে মৃত শিশুর বাবা রাজীব চক্রবর্তী বাদী হয়ে নগরীর খুলশী থানায় মামলা করেছেন। সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অবহেলার কথা জানালে শিশুর বাবা-মাসহ স্বজনদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুরাজ চক্রবর্তী নামে প্রায় ৩ মাস বয়সী শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার মামলা রেকর্ডের তথ্য নিশ্চিত করেছেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ চাকমা। মামলায় ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে বলেও জানান ওসি। রাজিব চক্রবর্তী পেশায় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। তাদের গ্রামের বাড়ি কানুনগো পাড়া। তবে তারা আকবর শাহ থানার সিটি গেইটের কালীর হাট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। এ দম্পতির বিয়ের ৬ বছরের মাথায় অনুরাজের জন্ম। অনুরাজ তাদের প্রথম সন্তান। জন্মের ২ মাস ২৬ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হল শিশুটির। তবে শিশুটির পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালককে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শিশুর পরিবারের সদস্যরা জানান, শ্বাস টান দেখা দিলে মঙ্গলবার অনুরাজকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান বাবা-মা। ওই চিকিৎসক শিশুটিকে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। সেখানে নিয়ে গেলে এনআইসিইউ খালি না থাকায় রাতেই ইউএসটিসি হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। পরদিন বুধবার শিশুটি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠে। অনেকটা সুস্থ হওয়ায় শিশুটিকে সাধারণ বেডে স্থানান্তরের কথাও জানায় চিকিৎসক-নার্সরা। তবে শিশুর পরিবারের সদস্যরা সাধারণ বেডে স্থানান্তর না করার অনুরোধ জানায়। ফলে শিশুটিকে এনআইসিইউতেই রাখা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটির মা গিয়ে অঙিজেন লেভেল ৯৫-এর ঘরে দেখেন। আধঘণ্টা পর আবার গেলে অঙিজেন লেভেল ৬০-৬৫ এর ঘরে দেখতে পান। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসকদের বিষয়টি জানান এবং সন্তানকে একটু দেখতে বলেন। কিন্তু সেখানে ৬/৭ জন বসা থাকলেও সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কেউ তাদের কথার গুরুত্ব দেননি। পরে বাবা গিয়েও অনুরোধ জানান।
শিশুটির বাবা রাজীব চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, সিনিয়র কোন চিকিৎসক ছিলেন না। ৬/৭ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন। তারা সবাই বসে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কেউ গেমস খেলছিলেন, কেউ ফেসবুক নিয়ে ছিলেন। আমরা আমাদের সন্তানকে একটু দেখতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেননি। পরে তারা গিয়ে আমাদের সন্তানের অঙিজেন লেভেল বাড়ানোর চেষ্টা করে। কেউ বুকে চাপ দিচ্ছিলেন। এরপর একজন সিনিয়র ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। ওই সময় আমাদের সবাইকে বের করে দেয়।
এরপরও অনেকক্ষণ শিশুটির মৃত্যু নিয়ে লুকোচুরি করে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। পরে আমাদের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। সুস্থ হয়ে যাওয়া সন্তানকে চোখের সামনেই মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির মা-বাবা। আর এর জন্য সেখানে দায়িত্বরতদের অবহেলাকেই দায়ী করেছেন তারা।
অবহেলার কথা জানালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আরো কয়েকজন যুবককে ডেকে আনেন জানিয়ে শিশুটির বাবা বলেন, সবাই মিলে আমাদের উপর হামলা চালায়। তাদের অনেকের হাতে লোহার রডও ছিল। পরে আমরা ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চাই। একটু পরই পুলিশ আসে। ভোর রাতেই সন্তানের শেষ কৃত্য সম্পন্ন করা হয়। পরে শুক্রবার সকালে থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের কথা জানান শিশুটির বাবা রাজীব চক্রবর্তী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক খালেদ ও আজাদী অবিচ্ছেদ্য অংশ
পরবর্তী নিবন্ধবিশেষ গণটিকা ক্যাম্পেইন আজ