চারদিকে উঁচু–নিচু পাহাড়, খাঁজে খাঁজে মাচাং ঘর। আছে সুপেয় পানির সংকট। বিদ্যুৎ তো স্বপ্ন। অসুখ–বিসুখে কবিরাজই ভরসা। যাতায়াতের পথ বলতে নদী কিংবা ঝিরি। বাকি পথ দুর্গম। এ অঞ্চলের মানুষ স্বপ্নেও ভাবতো না–সন্তান লেখাপড়া শিখবে, স্কুলে যাবে।
রাঙামাটির দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষ তাদের সন্তানের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কল্যাণে। এ পাহাড়ে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি নিয়েছেন নানান উদ্যোগ। খবর বাংলানিউজের।
সবুজ–শ্যামলে ঘেরা পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে তোলা লাল টিনের ছাউনির স্থাপনা দেখে আসতে যে কারো মন চাইবে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম ইউনিয়ন বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়। এ ইউনিয়নে আগে উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। ছিল না কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। উপজেলার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতেই হিমশিম খেত। সেখানে উচ্চ বিদ্যালয় তো আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। শিক্ষার্থীদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামসেদ আলম রানা। এরইমধ্যে বড়থলি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। চলছে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। জানুয়ারির প্রথমদিকে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর পাঠদানের পরিকল্পনা রয়েছে ইউএনওর। বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে বান্দরবান জেলার রুমা হয়ে পায়ে হেঁটে এই ইউনিয়নে যেতে লাগে ৩ দিন। বলতে গেলে সব ধরনের সুযোগ সুবিধায় পিছিয়ে এই ইউনিয়ন। শিক্ষা বিস্তারের জন্য শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা কেন্দ্রের অধীনে পরিচালিত কিছু পাড়া কেন্দ্রে প্রাক–প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্গম এই ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ বিদ্যালয়টি। এই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বড়থলি পাড়ায় বিদ্যালয়ের জন্য ১৮শ বর্গফুট আয়তনের ৫টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। নামকরণ করা হয়েছে বড়থলি উচ্চ বিদ্যালয়, যেখানে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামসেদ আলম রানা বলেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান গত বছর বিলাইছড়ি উপজেলায় এসে একটি স্কুল ও অতি দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। তারই আলোকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের আর্থিক সহযোগিতায় বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন বড়থলি ইউনিয়নে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে বড়থলি উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ১৮শ বর্গফুট আয়তনের ৫টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে পাঠদান শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টি ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হবে। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। খুব শিগগির এই ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হবে।