বয়স মাত্র ১০ বছর। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থী। অথচ তার কাছ থেকে এখন অনেকে শিখছে ইংরেজিতে কথা বলার কায়দা। খুদে এই শিক্ষকের নাম উম্মে মাইসুন। মাইসুন সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে ‘রবি টেন মিনিটস স্কুলের’ একটি ভিডিওর মাধ্যমে। কীভাবে ইংরেজিতে কারও সঙ্গে পরিচিত হতে হয় তা নিয়ে ছিল ভিডিওটি। জুনের মাঝামাঝি সময়ে রবি টেন মিনিটস স্কুলের ফেসবুক পেজ থেকে ওই ভিডিওটি আপলোড করা হয়। রাতারাতি ‘মিলিয়ন’ ভিউ হয় সেখানে। মুহূর্তেই হাজার হাজার মন্তব্য জমা পড়ে ভিডিওর নিচে। আর এখন পর্যন্ত ৫৬ লাখ বার রবি টেন মিনিট স্কুলের চ্যানেল থেকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে। এরপর শুরু হয় ছোট্ট মাইসুনের নতুন যাত্রা। একে একে ১২টি ভিডিও আপলোড করা হয় টেন মিনিটস স্কুলের পেজে। সবমিলিয়ে এসব ভিডিও দেখা হয় প্রায় দেড় কোটি বার। এখন সে সবার প্রিয়, পরিচিত।
ছোট্ট মাইসুন চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মা-বাবার সঙ্গে থাকে চট্টগ্রামের আশকারদীঘির পাড় এলাকায়। গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দবাড়িতে। ভিডিও ব্লগিং, ইংরেজি ভাষার চর্চার পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি বই পড়াও মাইসুনের সমান আগ্রহ। সে জানায়, বাবা মায়ের উৎসাহে পড়তে শেখার পরই গল্পের বই পড়ার নেশা তার। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি বইও সমানতালে পড়া হচ্ছে। আসল কথা হচ্ছে ভয়টা। বিদেশি ভাষার প্রতি ভয় দূর হওয়ায় বাকি বাধা জয় করা সহজ হয়েছে। এখন ইংরেজিতে গল্পও লিখছে সে। মাইসুনের ইংরেজির শেখার গল্পটা এরকম- মাইসুনের খালা থাকেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে। একবার খালারা দেশে এলে সমবয়সী খালাতো বোনদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিল সে। পরস্পরকে বোঝা ও বোঝানোয় অর্থাৎ যোগাযোগের বড় একটা সমস্যাই যেন খেলাধুলার মজা নষ্ট করে দিচ্ছিল। ছোট্ট মাইসুন নিজ থেকেই এর সমাধান বের করল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইংরেজি প্র্যাকটিস করা শুরু করল। কার্টুন-সিনেমা দেখা ও ইংরেজি বই পড়ার অভ্যাস করল। এভাবেই মুখের জড়তা কাটল, ভয় দূর হলো। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই মাইসুন বুঝেছে চেষ্টা করল যে কারো পক্ষেই বিদেশি ভাষা আয়ত্ব করা সম্ভব। জরুরি কেবল ভয়টা ভেঙে দেওয়া। তেমন চিন্তা থেকেই বাবার সাহায্য নিয়ে সে শুরু করে ‘ভলগিং’ (ভিডিও ব্লগিং)। ইউটিউবে ‘মাইসুন’স ওয়ার্ল্ড’ নামে চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মাইসুনের যাত্রা। ইউটিউব চ্যানেল যাত্রা শুরু করে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। এখন পর্যন্ত চ্যানেলটিতে সাবস্ক্রাইব করেছেন ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ।
শুধু তাই নয়; ইংরেজি নিয়ে নিজের বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করতে ফেসবুকেও সক্রিয় মাইসুন। ফেসবুকে ইংরেজিতে ‘মাইসুনস ওয়ার্ল্ড’ নামের চ্যানেলটিতে ফলোয়ার রয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজারেরও বেশি। এসব চ্যানেল ও পেজ পরিচালনা এবং কনটেন্ট তৈরির কাজ করেন মাইসুনের বাবা আশরাফ রুবেল, মা উম্মে সালমা চৌধুরী। ইউটিউব চ্যানেলে মাইসুনের এখন পর্যন্ত ভিডিওর সংখ্যা ৪৪টি।
নিজের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও মাইসুন সক্রিয় রবি টেন মিনিটস স্কুলের কার্যক্রমে। ইতিমধ্যে ‘কিডস স্পোকেন ইংলিশ’ নামের টেন মিনিট স্কুলের একটি প্রোগ্রাম দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেবল ভাষা নয় মাইসুনের পছন্দের তালিকায় রয়েছে নানান বিষয়। বিশেষ করে গণিত তাকে ভাবতে শেখায়। আর রহস্য-উপন্যাস, গল্প তাকে কল্পনা করতে শেখায়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী মুহম্মদ জাফর ইকবাল মাইসুনের প্রিয় লেখক। ইংরেজি গল্পের বইয়ে তার প্রিয় সিরিজ হ্যারি পটার, জেরিনিমো স্টিলটন, থিয়া স্টিলটন ও প্রিন্সেস ডায়েরিস।
বড় হয়ে গবেষক হওয়ার স্বপ্ন মাইসুনের। বিজ্ঞানের জগতের রহস্যের সন্ধান করতে চায় সে। মূলত কম্পিউটার বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন তার।
মাইসুন জায়গা করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। নিজেদের কাজ দিয়ে বিশ্ব বদলাচ্ছে এমন শিশুদের নিয়ে অনলাইনে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে ‘অ্যাওয়ার্নেস ৩৬০’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। আফ্রিকা থেকে এশিয়া, ক্যারিবিয়ান থেকে আমেরিকা-এমন দেশের সাতজন খুদে জাদুকর অংশ নেন ওই ওয়েবিনারে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করে মাইসুন। গত ১৫ জুলাই অনুষ্ঠানটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বমঞ্চে খুদে জাদুকরদের সঙ্গে মাইসুন তার কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। কীভাবে সে ইংরেজি শেখায়, কীভাবে অন্যদের অনুপ্রাণিত করে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেয় খুদে শিক্ষক মাইসুন।