রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বটতলী এলাকা। বরইছড়ি–ঘাগড়া আঞ্চলিক (রাঙামাটি–বান্দরবান) সড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে রয়েছে কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধনা তঞ্চঙ্গ্যা ও তার ভাই সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যার মালিকানাধীন পাহাড়। গত কয়েক মাস ধরে সড়কের পাশ থেকে চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড়জুড়ে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার চিহ্ন। প্রায় ৩০০–৪০০ মিটার পাহাড় নব্বই ডিগ্রি এঙ্গেলে কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে ইতোমধ্যে। সড়কের পাশ ঘেঁষেই পাহাড় কাটা চললেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধনা তঞ্চঙ্গ্যার কাছ থেকে পাহাড়ের মাটি কিনে পাহাড়টি কাটছেন কাপ্তাই উপজেলার লাগোয়া রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অর্জুন মনি চাকমা। গত ২–৩ মাস ধরে রাঙামাটি–বান্দরবান আঞ্চলিক পাশ ঘেঁষেই আওয়ামী লীগ–বিএনপির এই দুই নেতার মিলেমিশে পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কেটে এসব মাটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা অর্জুন মনি চাকমার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার চিহ্ন। সড়কের পাশ থেকে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রধান সড়কের পাশ থেকে প্রায় ৩০০–৪০০ মিটার সড়কের মতো করে পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বটতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা ধনা তঞ্চঙ্গ্যা ও তার ভাই স্কুল শিক্ষক সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যার মালিকানাধীন পাহাড়ের মাটি কেটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করছেন কাউখালীর বিএনপি নেতা অর্জুন মনি চাকমা। এমনকি পাহাড় কাটার কাজটি করা হচ্ছিল সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত। পাহাড় কাটা চক্রে বিএনপির নেতা অর্জুন মনি চাকমার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬ (খ) অনুযায়ী, পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় কাটায় স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই আইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও জাতীয় স্বার্থে পাহাড় বা টিলার কাটার প্রয়োজনীয়তা হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কাটা যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বটতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাহাড় কাটার ফলে মাটি ধসে সড়কে পড়ে হতাহতের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাহাড় কাটার জন্য পাহাড়ের উপর লাগানো বৃক্ষগুলো আগেই কেটে ফেলা হয়। কাপ্তাই উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে সড়কের পাশে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চললেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রায় প্রতি রাতে কাটা হচ্ছিল পাহাড়।
পাহাড়ের মালিক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধনা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এটা পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে, পাহাড়ের ওই পাড়ে একটি পাড়া রয়েছে। ওই পাড়ার মানুষজন আমাকে অনুরোধ করেছেন, যদি পাহাড় কেটে রাস্তার মতো করা হয় তাহলে তাদের জন্য চলাচলের সুবিধা হয়। পরে আমি বলেছি সুবিধা হলে মাটি কেটে নিতে। মূলত এনডিই নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে মাটি ব্যবসায়ীরা পাহাড় কেটে মাটি দিচ্ছে। পাহাড় কেটে মাটি কাটার অনুমতি প্রসঙ্গে আমি কিছুই জানি না, সেগুলো যারা কেটেছে তারা জানবে। প্রশাসনিক ও অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো যারা মাটি কাটছে (অর্জুন মনি চাকমা) তারাই দেখবে।
পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অর্জুন মনি চাকমার মোবাইলে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে ওয়াগ্গগ্গগ্গগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ঘাগড়া থেকে লোকজন এসে পাহাড় কাটছে বলে খবর পেয়েছি। মনি চাকমা নামে একজনের নাম শুনেছি। এ ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। পরে বিষয়টি নিয়ে আর খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।
পাহাড় কাটা প্রসঙ্গে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিসান বিন মাজেদ বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মুমিনুল ইসলাম বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।