আ. লীগের ৭ সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে, বাড়তে পারে আরও

উপজেলা নির্বাচন : সাতকানিয়া

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাতকানিয়া | বৃহস্পতিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য ৭ প্রার্থী। এবার দলীয় প্রার্থী ও প্রতীক না থাকার ঘোষণায় শুরু হয়েছে নতুন সমীকরণ, বাড়তে পারে তাই প্রার্থীর সংখ্যাও। এদিকে দলীয় প্রতীক পাওয়ার আশায় আগে যারা প্রার্থী হওয়ার কথা জোর গলায় বলেছেন তাদের অনেকে এখন চুপসে গেছেন। কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের মন জয়ে যারা ব্যস্ত ছিলেন তারা এখন মনোনিবেশ করছেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের দিকে। তবে মাঠে যারা প্রার্থী হওয়ার কথা বলে দোয়াপ্রার্থনায় নেমেছেন তারা সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রিকল চাকমা জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচনের তফসিল কখন দেবে এবং কোন ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে গত বারের মতো এবারেও শেষ ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এলাকায় তাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মুঠোফোনে কল করে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। হাজির হচ্ছে অসুস্থ নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের শয্যা পাশে। জুমার নামাজে, মসজিদমাদ্রাসার বার্ষিক সভায়, মৃত ব্যক্তির জানাজায়, বিভিন্ন মেজবানে, দলীয় সভাসমাবেশে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি বেড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। কেউ কেউ প্রার্থী হওয়ার কথা প্রকাশ্যে না বললেও দোয়া প্রার্থনা করে বেড়াচ্ছেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে এ মুহূর্তে যারা মাঠে রয়েছেন তারা হলেনচট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, স্বাচিপের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার, সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মো. কাজেমুল ইসলাম চৌধুরী।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর জানান, এলাকার সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত দলীয় ও সামাজিক কাজ করে আসছি। জনপ্রতিনিধি না হয়ে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। যেকোনো দুর্যোগদুর্বিপাকে মানুষের পাশে ছিলাম। দলের সকল নেতাকর্মীর সঙ্গে রয়েছে আমার ভাল সম্পর্ক। এছাড়া গ্রহণযোগ্যতা আছে বলেই জেলা আওয়ামী লীগ আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করেছে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী জানান, সাতকানিয়ায় কেউ যখন নির্বাচন করার সাহস পায়নি তখন আমি নির্বাচন করে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছি। ১৯৮২ সাল থেকে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। সাতকানিয়া মহিলা কলেজ ও মির্জারখীল উচ্চ বিদ্যালয়সহ যখন যেখানে ছিলাম সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখন যারা নির্বাচন করবে বলে শুনতেছি দলের দুঃসময়ে তারা কেউ ছিল না।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্বাচিপের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, গত দুই মেয়াদে সদ্য সাবেক এমপির সঙ্গে পরপর দুই উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব ও দূরত্বের কারণে সাতকানিয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সুশাসনের কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি অধরা থেকে গেছে। তাই দলীয় নেতাকর্মীসহ উপজেলার সাধারণ মানুষ মনে করে আমি বর্তমান এমপির সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারব।

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী জানান, দীর্ঘ ১০ বছর যাবত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দল ও এলাকাবাসীর সুখেদুঃখে পাশে আছি। দলের নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণ আমাকে এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে দেখতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এবার আমি উপজেলা নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার জানান, এবারে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিতর্কিত। তাদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে মাটি, বালু ও ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং থানার দালালের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। সবাই আমাকে স্পষ্ট ও সত্যবাদী হিসেবে জানে।

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরী জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এলাকায় অবস্থান করে এমন একজনকে উপজেলা চেয়ারম্যান করা দরকার। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি এবং মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেছি। সৎ ভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। এজন্য মানুষ আমার মতো একজনকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চায়। এ কারণে এবার আমি নির্বাচন করব।

নির্বাচনে প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে জানান, এবারে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও প্রতীক থাকবে না। কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে এ ধরনের একটি নির্দেশনা এসেছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত, উৎসব মুখর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যে কেউ প্রার্থী হতে পারবে। এতে কোনো ধরনের বিধি নিষেধ নাই।

এদিকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জামাল উদ্দিন জানান, দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এ মুহূর্তে আমাদের কোনো আগ্রহ নাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ১২ বছরের কারাদণ্ড, কোটি টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধউচ্ছেদের পর আবার দখল