দীর্ঘ সময় এলাকায় ছিল না এমন একটি পক্ষ পতিত আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে রাউজানে বাড়ি–ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, রাহাজানি ও খুনের সাথে লিপ্ত হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী। গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে রাউজান উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। ‘হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানে’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার এর অনুসারী বলে পরিচিত।
সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে উপজেলা বিএনপির একটি গ্রুপ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা সংবাদ সম্মেলনে আসা নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারীরা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচিত।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জসিম উদ্দিন বলেন, সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে বাধা আসে। আমরা নির্ধারিত সময়ে এসেছিলাম। এ সময় আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন করতে এসেও আমরা নিরাপদ বোধ মনে করছি না। তবে কারা বাধা দিয়েছে তাদের নাম জানাননি তিনি। এছাড়া রাউজানে কারা সন্ত্রাসী করছে জানতে চাইলে বলেন, আপনারাও (সাংবাদিক) জানেন, আমরাও জানি। আপনারা একটু কষ্ট করে নিজেরা (সাংবাদিক) কালেকশন করে নিবেন। এটা আপনাদের ওপর দায়িত্ব দিলাম। রিকুয়েস্ট করলাম।
তিনি বলেন, রাউজানে এখন খুব খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরা রাউজানের জনগণকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, নির্যাতন ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং প্রশাসনকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানাচ্ছি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কারো বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন নয়। রাউজান অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। কারো বিরুদ্ধে আমাদের বক্তব্য নয়। সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখুক, সরকার উন্মুক্ত করুক কারা সন্ত্রাসী করছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কোনো নেতার বিরুদ্ধে নই। আমরা ১৭ বছর ধরে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছি, মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। ৫ আগস্টের পর এলাকায় গিয়ে দেখলাম, যারা ১৭ বছর ধরে আমাদের জ্বালিয়েছে, তারা রূপ পরিবর্তন করেছে। মানুষ একই, কিন্তু রূপ পরিবর্তন করে তারা আজও আমাদের জ্বালাচ্ছে। যারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদধারী নেতা ছিল, এমপির সঙ্গে যাদের ছবি আছে, ব্যানার–পোস্টার ছিল, তারাই দেখি এখন রূপ পরিবর্তন করে তারেক রহমানের সৈনিকদের অত্যাচার–নির্যাতন করছে। আমরা এই ক্ষোভ জানাতে এসেছি, কোনো নেতার সঙ্গে রেষারেষি করতে আসিনি।
লিখিত বক্তব্যে জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় ২৪ জানুয়ারি রাউজানের নোয়াপাড়ায় জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন ব্যবসায়ীকে দিনেদুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। দলের পরিচয়ে তথাকথিত ব্যক্তিরা এ হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের দলের নেতাকর্মীদের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি করে দিচ্ছি, এ হত্যাকাণ্ডের সাথে পরিকল্পিতভাবে বিএনপির কোনো পদধারী নেতাকর্মীকে যেন জড়ানো না হয়। সিটিভি ফুটেজ তদন্ত করে আসল হত্যাকারীদের শনাক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর থেকে যারা এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গোলাম আকবর খোন্দকার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী অপকর্মকে কোনো সময় প্রশ্রয় দেননি। বরং আজীবন এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাউজানের ৪৮টি ব্রিকফিল্ড থেকে দুই লক্ষ টাকা করে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা তুলে কার হাতে তুলে দিয়েছেন তা অনেকেই জানে। রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রামগামী কাঠ বোঝাই প্রতি ট্রাক থেকে বন বিভাগের মাধ্যমে ৩০০ টাকা করে চাঁদা কার কাছে যায় এবং গহিরা, রাউজান মুন্সিরঘাটা, নোয়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও লোকজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকা কোথায় গেছে প্রশাসন জানলেও তা জনগণ জানতে চায়। এলাকায় কাদের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি চলছে তা প্রশাসন জানলেও রহস্যজনকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করছে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পশ্চিম গুজরায় ১৫ পার্সেন্ট চাঁদা পরিশোধ না করায় ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদা মতো চাঁদা আদায় করতে না পেরে তারা সিআইপি ইয়াছিনের বাড়িতে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে। সিআইপি ফোরকানের ওপর হামলা করেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। এইসব চাঁদাবাজি, লুটতরাজের টাকা কার হাতে যাচ্ছে তাও সকলে জানে। বড় অংকের চাঁদা নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিএনপিতে আশ্রয় দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, রাউজান পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট রফিকুল আলম, শামসুল হক বাবু, দিদারুল ইসলাম, সেলিম নুর, জিয়া উদ্দিন, নাছির উদ্দিন, আব্দুল মান্নান, মুরাদুল আলম, জি এম মোর্শেদ, ইকরামুল হক, এমদাদুল হক, এন আই বাবুল, মুরাদুর রহমান, এড. সাঈদ, জসিম উদ্দিন, সিরাজউদ্দৌলা, মহিউদ্দিন, হাসান মোর্শেদ, মাহবুবুল আলম, রায়হান উদ্দিন ইরফান, সাফায়েত হোসেন রাকিব ও মিজানুর রহমান।