বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। তিনি বলেন, বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে শেখ নিজেই নিজের কবর রচনা করেন এবং শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কবর রচনা করেছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে কক্সবাজার গোল চত্বর মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্ত, অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জন দাবিতে সারা দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সালাহউদ্দীন আহমদ বলেন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তানের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান রাজনৈতিক মৃত্যুবরণ করেন। আর ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে শেখ নিজেই নিজের কবর রচনা করেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে, আওয়ামী লীগের দাফন কার্য সম্পন্ন করে। এখন আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। মুর্দা হাসিনা কাফন পরে কথা বলছে দিল্লিতে বসে। পতিত ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা হাসিনা নতুন বাংলাদেশে কাফন পরে কথা বলে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এদেশে মুর্দার কথা বলা জায়েজ নাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী শব্দ। আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা এদেশে রাজনীতি করেনি। করেছে সংসদীয় একনায়ক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খুন, গুম, লুটপাট। যার কারণে শেখ হাসিনা এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত, বিশ্ব স্বীকৃত একজন খুনী।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্যে সালাহউদ্দীন বলেন, ডিসেম্বরের আগেই দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। কিছু উপদেষ্টা জনগণের পালস বুঝে না। তাদের নসিহত করুন, অথবা বিদায় দিন। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট অনুযায়ী নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করুন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতির উন্নতিতে নজর দিন। পতিত হাসিনার দোসরদের অস্থিরতার অপচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করুন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনুপাত–অনুপাত নির্বাচন যারা চান, তাদের রাজনৈতিক অনুপাতের জ্ঞান নেই। স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসায় না। এদেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছে। বৈষম্যহীন জ্ঞানলদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ছাত্র–জনতা ম্যান্ডেট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এজন্য ভোটবিহীন এইদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুতরাং জাতীয় সংসদেই নির্ধারিত হবে গণতান্ত্রিক সংস্কারের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্র রক্ষার সকল কর্ম।
তিনি আরও বলেন, শহীদ জিয়া এদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছেন। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিতাড়নের মধ্য দিয়ে পুনস্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাই বিএনপিকে এদেশের মানুষ চায়।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, কেন্দ্রীয় সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, সাবেক এমপি আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।