আ. লীগের আমলে বছরে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে

সেমিনারে ইফতেখারুজ্জামান

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামইআরএফ কার্যালয়ে ‘পাচার হওয়া অর্থ ও তা উদ্ধারের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাংলানিউজের।

বিডিনিউজ জানায়, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা অসম্ভবের পর্যায়ে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনদুদক সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি একটি পেনিও ফিরিয়ে আনতে পারে, তিনি অবাক হবেন। বাংলাদেশে টিআইবির প্রধান বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব কিনা? উত্তর হচ্ছে, ইট ইজ অ্যাবসলিউটলি পসিবল, কোনো ডাউট নাই। কিন্তু এট দ্য সেইম টাইম যেটা বলতে হবে, ইট ইজ এক্সট্রিমলি ডিফিকাল্ট, নেয়ারলি ইম্পসিবল। আমি কিন্তু পসিবল বলছি না, এটা এত ডিফিকাল্ট, যে নেয়ারলি ইম্পসিবল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যদি পাচারকৃত অর্থ ১০০ মিলিয়নও ফেরত আসে, দ্যাট উইল বি সারপ্রাইজ। যদি এনি অ্যামাউন্টও ফেরত আসে, আমার জন্য সেটিও হবে সারপ্রাইজ।

কেন এমনটি মনে করছেন, সেই কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আজকেও যদি শুরু হয়, যেহেতু ইতোমধ্যে একটা টাস্কফোর্স হয়েছে, আমি তার ওপর আস্থা নিয়েই বলছি, তারা তাদের কাজটা সুন্দর করুক। ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করুক। দুই বছরের মধ্যে যদি সম্ভব হয়, এর মধ্যে যদি একটা সিঙ্গেল পেনিও ফেরত আসে, আমাদের জন্য এটা সারপ্রাইজ হবে।

কী করতে হবে : যেসব দেশে অর্থপাচার হয়েছে সেসব দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলোর পারস্পরিক আইনি চুক্তি করার পরামর্শ দেন ইফতেখারুজ্জামান। বলেন, তাদের মাধ্যমে এমন একটা পর্যায়ে যেতে হবে যেখানে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব।

এ প্রক্রিয়াও অনেক দীর্ঘসূত্রতার বিষয় উল্লেখ করে তিনি দুদক, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা শাখা বিএফআইইউকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদও দেন। সংস্থাগুলো এককভাবে কাজ করলে হবে না। আমরা কতটুকু চাহিদা (পাচারের অর্থ যে দেশে গেছে তাদেরকে চাপ বা আলোচনা) সৃষ্টি করতে পারব, সেটি কিন্তু বড় প্রশ্ন।

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের সিংহভাগই বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে হয় বলেও মন্তব্য করেন দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান। এর মধ্যে বাণিজ্যের আড়ালে বছরে কমপক্ষে ৯ বিলিয়ন ডলার, রেমিট্যান্স, এমএফএস ও হুন্ডির মাধ্যমে বাকি অর্থ বিদেশে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এঙট্রিমলি কনজারভেটিভ হিসাব করলেও ১২১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়।

সালমান এফ রহমানকে হত্যা মামলা কেন : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগে মামলার সমালোচনা করেন ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এর বদলে তার বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণের মামলা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

হত্যা মামলায় তার সংযোগ প্রমাণ কঠিন হলেও ঋণখেলাপির মামলায় সহজে প্রমাণ সম্ভব বলে মত দিয়ে তিনি সালমানের বাড়িঘর, স্থাবরঅস্থাবর সম্পদ জব্দ করে বিক্রি করে টাকা আদায়ের পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, এটার প্রমাণ সহজে করতে পারবেন। এটা করেন ইমিডিয়েটলি।

বৈদেশিক ঋণ রিভিউয়ের পরামর্শ : সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এডিবি, জাইকা, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, চীন ও ভারত থেকে নেওয়া সকল ঋণের স্বাধীন রিভিউ করার কথা বলেন আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, দেখতে হবে আমরা যে বিদেশ থেকে লোন এনেছি তার কতটুকু কাজে লেগেছে আর কতটুকু কাজে লাগে নাই, কতটুকু যৌক্তিক ছিল? কতটুকু ব্যবহার হয়েছে আর কতটুকু ‘চুরি’ হয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিভিউ করান। জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন সংস্থা আঙ্কটাডের মাধ্যমে এই রিভিউয়ের দাবি তোলেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে শত বিলিয়ন ডলারের পাচারের অভিযোগ এনে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এটি না হলে আমাদের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাত না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে রোহিঙ্গাসহ ৯ কৃষককে অপহরণ
পরবর্তী নিবন্ধআজ থেকে শুরু হচ্ছে আয়কর তথ্য সেবা মাস