আ. লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট

তিন সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়েও রিট । রিট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য নয়, বিরত রাখতে : দুই সমন্বয়ক

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট হয়েছে। এ বিষয়ে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার আরজি পেশ করা হয়েছে রিটে। রিটে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, বেআইনি প্রক্রিয়ায় অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দলগুলোকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে রিটে। খবর বাসসের।

আওয়ামী লীগ ছাড়াও অপর যে ১০টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), গণতন্ত্রী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, মার্ঙিস্টলেলিনিস্ট (বড়ুয়া) ও সোশিওলিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ তিনজন আবেদনকারী গতকাল সোমবার রিটটি করেছেন। অপর দুজন হলেন মো. আবুল হাসনাত ও মো. হাসিবুল ইসলাম। এছাড়া এই তিনজন দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আরেকটি রিট করেছেন। সেখানে তিন নির্বাচনের গেজেট বাতিল চাওয়া হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে এমপিদের সকল সুযোগ সুবিধা বাতিল করে তা প্রত্যাহারের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সাথে ওইসব নির্বাচনের এমপিদের বিরুদ্ধে কেন রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনা হবে না, সে বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।

রিট আ. লীগকে নিষিদ্ধের জন্য নয়, বিরত রাখতে : বিডিনিউজ জানায়, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আদেশ চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। তারা বলছেন, তারা দুটো রিট আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের বিগত তিনটি নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে। সেখানে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়নি, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার কথা বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ রিট আবেদন করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে। পরে এ বিষয়ে একই বক্তব্য আলাদাভাবে ফেইসবুকে পোস্ট করে বিষয়টি স্পষ্ট করেন দুই সমন্বয়ক। সেখানে বলা হয়, তারা দুটো রিট আবেদন করেছেন। তবে দল হিসেবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন বাতিলের কোনো কথা রিটে নেই। আওয়ামী লীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দিবে না সে বিষয়ে প্রথম রিট। এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদেরকে পলিটিক্যাল সকল অ্যাকটিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট।

তাদের আইনজীবী আহসানুল করিম জানিয়েছেন, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি সিকদার মো. মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সত্তা হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ২৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৫ বছর দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনে অংশ নেওয়া কোনো কোনো পক্ষের। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রজনতাকে নির্বিচারে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং ক্ষমতাচ্যুত দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত আগস্ট মাসে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। সারডা সোসাইটি নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক আরিফুর ওই আবেদন করেছিলেন। ১ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সেটি খারিজ করে দেয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সে সময় শুনানিতে বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের। সংবিধানে রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা খর্ব করবে না সরকার। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সে সময় বলেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না, যদি না কোনো জঙ্গিবাদী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত থাকে। আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে : খসরু