আয়ারল্যান্ডকে ২১৭ রানে হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

মিরপুর টেস্টের শেষ দিনে আইরিশদের রেকর্ড গড়া ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশ জিতেছে ২১৭ রানে। এ টেস্ট জিততে রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। যদিও দুই ম্যাচের সিরিজ প্রত্যাশিতভাবেই ২০ ব্যবধানে বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে। মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে কোনো সফরকারী দল আগে কখনও ১০০ ওভার খেলেনি। কোনো সফরকারী দল চতুর্থ ইনিংসে আগে কখনো ২৫০ রান করতে পারেনি। তবে এবার পেরেছে আয়ারল্যান্ড। বীরোচিত ব্যাটিং পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে শেষ দিনে বাংলাদেশকে অনেক ভুগিয়ে তবেই হার মেনেছে তারা। আইরিশ প্রতিরোধ ভেঙে জিতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

স্রেফ চার উইকেট নিয়ে শেষ দিন শুরু করেও গতকাল রোববার চমকপ্রদ ব্যাটিং পারফরম্যান্সে ৫৯.৩ ওভার ব্যাটিং করেন আইরিশরা। শেষ পর্যন্ত ১১৩.৩ ওভারে ২৯১ রানে থামে তাদের ইনিংস। সাকিব আল হাসানকে টপকে আগের দিনই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড গড়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। শেষ দিনে তিনি দেশের প্রথম বোলার হিসেবে স্পর্শ করেন ২৫০ উইকেট। ৫৭ টেস্টে এই মাইলফলকে পা রেখে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে দ্রুততম হিসেবে তিনি ছুঁয়ে ফেলেন রাঙ্গানা হেরাথের বিশ্ব রেকর্ড। দুই ইনিংসেই তার প্রাপ্তি চারটি উইকেট। দুই টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়ে তিনি সিরিজের সেরা। আলাদা করে বলতে হবে স্পিনার হাসান মুরাদের কথাও। শেষ ইনিংসে চারটি উইকেট নিয়েছেন তিনিও। আয়ারল্যান্ডের নবম উইকেট জুটি যখন বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন তিনিই টানা দুই বলে শেষ দুই উইকেট নিয়ে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের জয়।

৬ উইকেটে ১৭৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে আয়ারল্যান্ড। কার্টিস ক্যাম্ফার ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রাখেন অনেকটা সময়। ২০৫ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন দুজন, যেখানে ক্যাম্ফারের অবদান ৫২ বলে ৩। ম্যাকব্রাইনকে (২১) ফিরিয়ে জুটি ভাঙার পাশাপাশি ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তাইজুল। পরের জুটিতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ক্যাম্ফার যথারীতি এক প্রান্ত আগলেই ছিলেন। জর্ডান নিল খেলেন দারুণ কিছু শট। মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ভাঙে ৪৮ রানের জুটি। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করে বোল্ড হন নিল। আইরিশ প্রতিরোধ পর্বে এরপর ক্যাম্ফার ও গ্যাভিন হোয়ের বীরত্ব। অভাবনীয় ব্যাটিং দক্ষতা দেখিয়ে বাংলাদেশের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ওভারের পর ওভার কাটিয়ে দেন দুজন। বাংলাদেশের স্পিনারদের হতাশ করেন তারা মাথা নিচু করে একের পর একে ডিফেন্স করে। একপর্যায়ে ফাইন লেগ, শর্ট ফাইন লেগ, স্কয়ার লেগ, মিড উইকেট, শর্ট মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখে সৈয়দ খালেদ আহমেদকে দিয়ে রাউন্ড দা উইকেটে এসে শরীর তাক করে বোলিংয়ের কৌশল নেয় বাংলাদেশ। লাভ হয়নি তাতেও। শেষ পর্যন্ত ৫৪ রানের জুটি থামে ১৯১তম বলে। হাসান মুরাদের দারুণ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন হোয়ে। অভিষিক্ত লেগ স্পিনার ৩৭ রান করেন ১০৪ বল খেলে। পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান শেষ ব্যাটসম্যান ম্যাথু হামফ্রিজ। জিতে যায় বাংলাদেশ। ২৫৯ বল লড়াই করে ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন ক্যাম্ফার। মিরপুর চতুর্থ ইনিংসে এত বেশি বল খেলার কীর্তি নেই আর কারও। আয়ারল্যান্ডের হয়ে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডেও ক্যাম্ফার ছাড়িয়ে যান নিজের আগের কীর্তিকে (২২৯ বল)। শেষ পর্যন্ত তারা হেরেছে। কিন্তু হারার আগে না হারার মানসিকতা ঠিকই দেখিয়েছে।

মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৭৬ ও আয়ারল্যান্ড ২৬৫ রান করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। এ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নামেন মুশফিকুর রহিম। শততম টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১০৬ ও অপরাজিত ৫৩ রান করায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিক। ম্যান অব দা সিরিজ হয়েছেন বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম।

দুই দল এখন লড়বে তিন ম্যাচের টিটোয়েন্টি সিরিজে। চট্টগ্রামে এই সিরিজ শুরু আগামী ২৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার)

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুপার ওভারে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশ ‘এ’ দলের
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা