আয়নায় নিজেকে শিশু থেকে বৃদ্ধ অবধি মানুষ নিজের পরিবর্তন দেখে দেখে বুড়ো হয়, কালো চুল থেকে পাকা অবধি, মসৃণ ত্বকে অমসৃণ ত্বকের দখলদারি বিরক্তিকর লাগে তবুও মানুষ কাঁচের আয়নায় নিজেকেই দেখতে থাকে বারবার। কিন্তু মনের ভিতরে একটা বিবেকের আয়না থাকে,আমরা কতোবার ঐ আয়নায় চোখ রাখি জানি না, কখনো আদালতে কাঠগড়ায় আসামি ও হই না বললে ভুল হবে, আমরা নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে চাই বহুবার, চিৎকার করে বলতে চাই আমিতো কোন দোষ করিনি, কোন ভুলকথা বলিনি। ঐ মনের আয়নায়ও আমরা নিজেকে দেখতে দেখতে বুড়ো হই, নিজেকে কখনো বেশ সুন্দর আবার কখনো বিরক্তিকরও মনে হয়। আমরা একটা বাহিরের কাঁচের আয়নায় নিজেকে যতোবার দেখি জানিনা, মনের আয়নায় কতোবার দেখতে চাই, হয়তো ঐ আয়নায় নিজের মনটাকে একবার দেখার চেষ্টা করলে বুড়ো, কুঁচকে যাওয়া চামড়ার মতো, অমসৃণ ত্বকের মতোই খসখসে, বিমর্ষ চেহারার মতো দৃশ্যমান হবে আমাদের মনের ছবিটা। কাচের আয়নায় নিজেকে দেখে এলোমেলো চুল, সরে যাওয়া টিপ, কাজলের ছড়িয়ে থাকা কালি মুছে, আঁচড়িয়ে যেমন ঠিক করে নেওয়া হয় ঠিক মনের আয়নায় ও কিছু পুরোনো মানুষ সরে যায়, এলোমেলো হয়ে থাকে, ভুলে যাওয়া একটা অভ্যাসে পরিণত হয়, মাঝেমধ্যে মনের আয়নায় তাদের যদি দেখা যায় তাদেরকে সঠিক জায়গায় আবারো বসানো যায়, এলোমেলো সম্পর্কগুলো আবারো যত্ন নিয়ে পরিপাটি করা যায়, মনটাও তখন মিষ্টি একটা হাসি দিতো আয়নায় চেনামুখগুলোকে সাজিয়ে নিতে পেরে….। কিন্তু আমরা মনের আয়নায় কয়বার উঁকি দিই? আমরা ভুলেই যাই ছোট্ট একটা অন্তরে কতো চেনা সম্পর্ক মুখ ঢেকে আছে দিনের পর দিন,বছরের পর বছর…। জীবনের আয়ু কখন ফুরায় কেউ জানে না, তবুও জীবনে ভালোবাসায় আরেকটু উদারতার বড্ড দরকার আজ। কারণ করোনা আমাদের হয়তোবা সামাজিক দুরত্বে থাকা শিখাতে গিয়ে একটু হলেও মনের দূরত্বে নিয়ে এসেছে বললে ও ভুল হবে না। জীবন থেকে আজ একটা দিনের মৃত্যু হলো বাকীদিনগুলো কয়দিনের আমরা কেউ জানি না, মনের আয়নায় কিছু গাঢ় সম্পর্কও একসময় ধূলোয় ঢেকে থাকে। ধূলোগুলো ঝেড়ে মুছে চকচকে না হোক মানুষগুলোর চেনা আন্তরিকতাগুলো আবারো দেখতে ইচ্ছে করে। আসছে নতুন বছরে সকলের আগামী শুভ হোক, শান্তির হোক, আন্তরিক হোক সকল সম্পর্ক। সামাজিক হোক মানসিকভাবে যতোটা পারা যায় নিরাপদ থেকে দূরত্ব ঘুচে যাক সকল সম্পর্কে। নতুন বছর সকলের সুস্থতায় ও নিরাপদে কাটুক।
লেখক : কবি, আবৃত্তিকার