আয়কর রেয়াত প্রসঙ্গে

জেনে নিন আপনার যত অধিকার:

জিয়া হাবীব আহসান | মঙ্গলবার , ২৯ মার্চ, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

কোন কোন ক্ষেত্রে আয়কর ছাড় দেয়া হয় বা মওকুফ করা হয় সে সম্পর্কে সাধারণ জনগণের জানা দরকার। নইলে তারা অধিকার বঞ্চিত হবেন। তাছাড়া তথ্য জানা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আমাদের অর্থ আইন, ২০২১ এ বর্ণিত কর হারের তপসিল অনুযায়ী প্রত্যেক নিবাসী ব্যক্তি করদাতা ও অনিবাসী বাংলাদেশী সহ, হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ও অংশীদারী ফার্মের প্রথম ৩ (তিন) লক্ষ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর আয়কর হার ‘শূন্য’ বা করমুক্ত হবে। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা এবং গেজেটভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা হবে নিম্ন রূপঃ (১) তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, মহিলা করদাতা, ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাঃ ৩,৫০,০০০/= টাকা, (২) প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতাঃ ৪,৫০,০০০/= টাকা এবং গেজেটভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতারঃ ৪,৭৫,০০০/= টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সীমা নির্ধারিত। কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা-মাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক প্রতিবন্ধী সন্তান/ পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০,০০০/= টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যে কোনো একজন এ সুবিধা পাবেন। আমাদের অর্থমন্ত্রী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রস্তাব করেন। এছাড়াও হাঁস-মুরগীর খামার হতে অর্জিত আয় করমুক্ত। (তবে এ ক্ষেত্রে অর্জিত আয় ১,৫০,০০০/- টাকা এর অধিক হলে অর্জিত আয়ের ১০% সরকারি বন্ড ক্রয়ে বিনিয়োগ করা যায়) হবে। এ বিধান কর বছর ২০১৫-২০১৬ এর জন্য প্রযোজ্য। ২০১৬-২০১৭ কর বছর হতে এ খাতের আয়ের করযোগ্যতার বিষয়ে ১৬/০৮/২০১৫ তারিখ একটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে; হাঁস-মুরগী, চিংড়ী ও মাছের হ্যাচারী এবং মৎস চাষ হতে অর্জিত আয় এর ক্ষেত্রে প্রথম ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হারে, পরবর্তী ১০ লক্ষ টাকা আয়ের উপর ৫% হারেও এবং অবশিষ্ট আয়ের উপর ১০% হারে কর প্রদেয় হবে; কতিপয় ক্ষেত্র ব্যতীত ব্যক্তি-করদাতা কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পনীর শেয়ার বিক্রয় হতে অর্জিত মূলধনী মুনাফা; হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদি রপ্তানী থেকে উদ্ভুত আয় ; জিরো কুপন বন্ড থেকে উদ্ভুত আয়; ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ড বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইইএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং প্রিমিয়াম বন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড হতে প্রাপ্ত সুদ আয়।
নিম্নরূপ করদাতারের রিটার্ন দাখিল করতে হবে না :-
১। বাংলাদেশে ফিক্সড বেজ নেই এমন অনিবাসীকে; ২। জমি বিক্রয়ের জন্য ১২ ডিজিটের টিআইএন গ্রহণ করেছেন কিন্তু করযোগ্য আয় নেই, ৩। ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য ১২ ডইজিটের টি আই এন গ্রহণ করেছেন কিন্তু করযোগ্য আয় নেই ৪। কতিপয় ক্ষেত্র ব্যতীত ব্যক্তি-করদাতা কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পনীর শেয়ার বিক্রয় হতে অর্জিত মূলধনী মুনাফা ৫। হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদি রপ্তানী থেকে উদ্ভুত আয় ৬। জিরো কুপন বন্ড ও ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড হতে প্রাপ্ত সুদ আয়।
উপরোক্ত ক্ষেত্র সমূহ ছাড়াও করমুক্ত আয়সীমার অধিক না হলে আয়কর প্রদেয় হবে না। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রেরিত অর্থও করমুক্ত। তবে উক্ত ক্ষেত্র সমূহের করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আয় না থাকলে নীল রিটার্ন হিসাবে দাখিল করতে হবে। পর পর ৩ বছর নীল রিটার্ন দাখিলের পর ডিসিটি বরাবর দরখাস্ত দিয়ে টিন বন্ধ করে দেওয়া জন্য অবগত করাতে হবে। এসব বিষয়ে সঠিক পরামর্শের জন্যে অভিজ্ঞ আয়কর উপদেষ্টা বা সরাসরি আয়কর কার্যালয়ের পরামর্শ গ্রহণ করা যায়।
লেখকঃ এডভোকেট, কলামিস্ট, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীনতা আমার অহংকার
পরবর্তী নিবন্ধসাহিত্যচর্চা : প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে