আঁতোয়ান গ্রিজম্যানের মূল পরিচয় ফরোয়ার্ড। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে উইংয়ে কিংবা স্ট্রাইকারের ঠিক পেছনে ‘নাম্বার টেন’ হিসেবে খেলে। তবে দিদিয়ে দেশমের ফ্রান্স দলে এখন তার পজিশন ভিন্ন। কাতার বিশ্বকাপে একজন জেনুইন মিডফিল্ডার হিসেবে নিজেকে নতুন করে উদ্ভাবন করেছেন তিনি। খেলছেন ‘নাম্বার এইট’ ভূমিকায়। তাতে সাফল্যও মিলছে ঢের। সবচেয়ে বড় লাভটা হচ্ছে ফ্রান্সের। টানা দ্বিতীয়বারের মতো তারা উঠে গেছে ফাইনালে। খবর বিডিনিউজের।
ফ্রান্সের ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান ছিল পল পগবা ও এনগোলো কান্তের। মিডফিল্ডে সুরটা বেঁধে দিতেন এই দুজন। চোটের কারণে মাঝমাঠের এই দুই সেনানীকে কাতার বিশ্বকাপে পাননি কোচ দেশম। তাই গ্রিজমানকে খেলাচ্ছেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে। ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য দেশম নিজেও খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন মিডফিল্ডার। নতুন ভূমিকা গ্রিজম্যান উপভোগ করছে বলেই জানালেন তিনি।
তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি আমি। তার পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, সে এতটাই নিঃস্বার্থ মানসিকতার যে, বল স্পর্শ করা ও পাস দেওয়া- দুটো বিষয়ই সে উপভোগ করে। এই ভূমিকায় অবশ্যই সে কম গোল করবে। কিন্তু, সে ট্যাকল করতে ও বল পুনরুদ্ধার করতে পছন্দ করে। তার বাম পায়ে সে ভালো কিছু করতে পারে, সেট-পিসগুলিতে বেশ ভালো শট নিতে পারে।
চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গ্রিজম্যান জেতেন ব্রোঞ্জ বল। ৪ গোল করে পান রুপার বুটও। তার চেয়ে দুটি গোল বেশি করে গোল্ডেন বুট জেতেন ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। সেবার গ্রিজম্যানের ২ অ্যাসিস্ট ছিল যৌথভাবে সর্বোচ্চ। কাতার আসরে এখনও পর্যন্ত ৬ ম্যাচ খেলে কোনো গোল তিনি পাননি। তিউনিসিয়ার জালে বল পাঠালেও ভিএআরে সেটি বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। তবে ফাইনালের আগে তার ৩ অ্যাসিস্ট কেইন, লিওনেল মেসি ও ব্রুনো ফার্নান্দেসের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল গ্রিজম্যানের। তার অ্যাসিস্ট থেকেই গোল দুটি করেন অহেলিয়া চুয়ামেনি ও অলিভিয়ে জিরুদ। সেমি-ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়েও গ্রিজম্যান অবদান রাখেন আড়ালে থেকে। এই ম্যাচে কোনো অ্যাসিস্ট তার নেই। তবে ম্যাচের সেরা তিনিই! এতেই ফুটে উঠছে ম্যাচে তার প্রভাব।
এই ম্যাচে অন্য যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে দ্বিগুণ সুযোগ তৈরি করেন গ্রিজম্যান। থিও এরনঁদেজের করা প্রথম গোলে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শুরুতে তিনিই পাস দেন কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। প্রথমবার এই ফরোয়ার্ড ঠিকমতো শট নিতে পারেননি। তার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে বল চলে যায় বাঁ দিকে এরনঁদেজের কাছে। কাঁধ সমান উঁচু বলে অ্যাক্রোবেটিক শটে গোলটি করেন এসি মিলান ডিফেন্ডার। ম্যাচটিতে জাল অক্ষত রাখায়ও গ্রিজম্যানের আছে বড় অবদান।
তিনবার বল ক্লিয়ার, দুটি ট্যাকল করে মরক্কোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন তিনি। মিডফিল্ডে গ্রিজম্যানের মাঝে কন্তের ছায়া দেখছেন পগবা। জুভেন্টাস মিডফিল্ডার যেমন ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘গ্রিজম্যানকন্তে।’ ৩১ বছর বয়সী গ্রিজম্যান নিজেও নতুন ভূমিকায় খেলাটা উপভোগ করছেন। কৃতজ্ঞ তিনি কোচের প্রতি।
‘এই নতুন ভূমিকায় আমি পুরোপুরি স্বাধীন। এখানে আমি অবশ্যই ডিফেন্স ও আক্রমণভাগের মাঝে যোগসূত্র হতে পারি। আমার সামনে তিন খেলোয়াড় আছে (এমবাপ্পে, জিরুদ ও উসমান দেম্বেলে), তাই বিকল্পও বেশি। কাজটা তাই আমার জন্য সহজ।’