আহমদ ছফা : এক বিদ্রোহী মননের মনীষা

| সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

আহমদ ছফা (১৯৪৩২০০১)। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ ছিলেন এক ব্যতিক্রমধর্মী বুদ্ধিজীবী, যিনি সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে দেখেছিলেন এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। বাঙালি জাতিসত্তার প্রশ্ন, শিক্ষাব্যবস্থা, মধ্যবিত্তের সংকট, ছাত্ররাজনীতি এবং সাহিত্যসংস্কৃতির অবক্ষয় নিয়ে তিনি যেভাবে উচ্চকণ্ঠ হয়েছিলেন, তা তাকে তার সময়ের অনেক লেখকের চেয়ে আলাদা করে তোলে। তিনি ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মাটির কাছাকাছি বেড়ে ওঠা এই মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। শৈশবেই তিনি নিজস্ব চিন্তার বিকাশ ঘটান এবং সাধারণ জীবনধারার মধ্যেই অসাধারণ উপলব্ধির জন্ম দেন। আহমদ ছফার সাহিত্যজীবন শুরু হয় ষাটের দশকে। তার লেখা উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, অনুবাদ এবং রাজনৈতিক লেখাসমূহ পাঠকের চিন্তাকে নাড়িয়ে দেয়। গল্প, গান, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনি মিলিয়ে তিরিশটির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন।তাঁর জনপ্রিয় একটি লেখা হলো অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে লেখা ‘যদ্যপি আমার গুরু’। এছাড়াও তাঁপ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে উপন্যাসসূর্য তুমি সাথী, অলাতচক্র, আরেক ফাল্‌গুন, গাভী বিত্তান্ত ইত্যাদি। প্রবন্ধ ও চিন্তাধর্মী রচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংকট, অরাজনৈতিক আধুনিকতার বিপর্যয়। এসব গ্রন্থে তিনি তীব্রভাবে সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করেন। আহমদ ছফা বিশ্বাস করতেন চিন্তার স্বাধীনতায়। তিনি কোনো রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শে নিজেকে পুরোপুরি আবদ্ধ রাখেননি, বরং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কলম চালিয়েছেন নির্ভীকভাবে। তার লেখায় জাতিগত আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন, শিক্ষাব্যবস্থার অপূর্ণতা, ভাষাসংস্কৃতির বিশ্লেষণ, কৃষকশ্রমিকের সংগ্রাম সবই উঠে এসেছে নির্মোহ ভাষায়। তাকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২০০১ সালের ২৮ জুলাই আহমদ ছফা মৃত্যুবরণ করেন। আহমদ ছফা শুধু একজন লেখক নন, তিনি এক সচেতনতার প্রতীক। তিনি সমাজের খোলস ভেঙে প্রকৃত সত্যকে খুঁজে পাওয়ার আহ্‌বান জানিয়েছেন। তার জীবন ও সাহিত্য প্রমাণ করে যে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ালে একা হলেও আত্মিক শক্তি হারায় না। আজকের সময়েও আহমদ ছফা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার দিশারি হয়ে আছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীর প্রধান সড়ক যানজট ও দুর্ঘটনামুক্ত এবং নিরাপদ করা হোক