আহমদিয়া জলসা ঘিরে রণক্ষেত্র পঞ্চগড়

নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি

| শনিবার , ৪ মার্চ, ২০২৩ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দিনভর কয়েকশ লোক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ভাঙচুর ছাড়াও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা মিছিল নিয়ে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এলে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া জানান। এরপর

 

 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয় বলে বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল রাতে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের ঘটনায় সংঘর্ষ; উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিনদিন শহরের উপকণ্ঠে আহমদনগরে এ জলসার আয়োজন করেছিল আহমদিয়া সম্প্রদায়। তার আগেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা। এ সময় এক তরুণের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। নিহত তরুণের নাম আরিফুর রহমান (২৭) বলে জানা গেছে। মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মক জখম হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, একজনের মারা যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। তবে কী কারণে মারা গেল তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের পরই মারা যাওয়ার কারণ বলা যাবে। শহরের পরিস্থতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

তবে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মৃত্যুর খবরটি এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানান। তিনি বলেন, আমরা উড়াউড়া খবর শুনছি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ও রাতে কয়েকটি সংগঠন জেলা শহরে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এর ধারাবাহিকতায় জুমার নামাজ শেষে আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধসহ তদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলগুলো

 

শহরের তেঁতুলিয়া সড়কের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে আসে। এই মিছিলকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ মিছিলের আশপাশে ছিল। কিন্তু আকষ্মিকভাবে মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে বলে জানান ওসি লতিফ মিয়া। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন

আহত হয়েছেন জানিয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশ ও বিজিবির গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় পঞ্চগড় বাজার এলাকায় একটি মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। পরে সেসব দোকান থেকে মালপত্র বের করে রাস্তায় পুড়িয়ে দেয়। আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে গেছে। শহরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিকে টহল দিতে দেখা গেছে। বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপারসহ

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে আছেন। দিনভর সংঘর্ষের ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বিকালের দিকে শহরের উপকণ্ঠ আহমদিয়া নগরে কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আহমদিয়া সম্প্রদায় তাদের সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করেছে বলে আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম শাখার আহ্বায়ক মাহমুদ আহমেদ সুমন জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে দুই শিশু অপহৃত
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির ১০ কেন্দ্রীয়সহ চট্টগ্রামের তিন শীর্ষ নেতার পরীক্ষা