বগুড়া–৪ (নন্দীগ্রাম–কাহালু) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, হিরো আলমের সঙ্গে একটা নির্বাচনে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও আপনি দলীয়ভাবে দাঁড়ান। এরপর আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন খেলা হয় কিনা। খেলার জন্য নাকি উনি মাঠে প্লেয়ার খুঁজে পান না!
গতকাল বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হিরো আলম এসব কথা বলেন। এদিন তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে উপ–নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের কাছে ফলাফল প্রত্যাখান করে ভোট ‘পুনঃগণনার’ আবেদন করেন। তিনি ৪৫টি কেন্দ্রে ভোট পুনঃগণনার আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, তবে কবে ফলাফল আবারও গণনা করবে সেই বিষয়ে কিছু জানায়নি। যদি তারা সাড়া না দেয় আমি হাই কোর্টে যাব। খবর বিডিনিউজের।
সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের ফলে শূন্য ছয়টি আসনে বুধবার উপ–নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। এতে বগুড়া–৪ ও বগুড়া–৬ আসনে প্রার্থী হন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত মুখ হিরো আলম, যার আসল নাম আশরাফুল আলম। ভোটের ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, বগুড়া–৪ আসনে ৮৩৪ ভোটে সরকার সমর্থক প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে হেরেছেন হিরো আলম। তিনি এই ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ভোটে তিনি জয়ী হলেও ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যে শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন, সংসদের সব আসন ছাড়ার পর বিএনপি হিরো আলমকে বগুড়ায় উপ–নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিল। তিনি বলেন, হিরো আলমের জন্য এত দরদ উঠলো ফখরুল সাহেবের, ফখরুল ভেবেছিলেন হিরো আলম জিতে যাবে। হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে।
গতকাল সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্যার বলেছেন, হিরো আলম জিরো হয়ে গিয়েছে। তবে হিরো আলম কখনও জিরো হয় না। যারা হিরোকে জিরো বানাতে চায় তারাই জিরো হয়ে গিয়েছে। সেতুমন্ত্রী আমাকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। তবে একজন মন্ত্রী দেশের নাগরিককে তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে পারেন না। তিনি কথায় কথায় বলেন, আসুন খেলা হবে। শক্তিশালী দলের সঙ্গে খেলতে চান। আমি ওবায়দুল স্যারকে জোর গলায় বলতে চাই, খেলা সবার সঙ্গে করতে হবে না।
হিরো আলম বলেন, আমার সঙ্গে একটু প্রতি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ভোটারদের ভয় না দেখিয়ে সুষ্ঠু ভোট দিয়ে দেখেন। উনি কেন আমাকে ছোট করে কথা বলেন। উনাকে বলব, বগুড়া–৪ থেকে ভোট করুন, আমাকে যেই আসন থেকে পরাজিত করে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি তার পক্ষে কাজ করছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি আমার পক্ষে কাজ করলে ভোটের দিন তারা মাঠেই থাকত। বিএনপির কোনো লোক আমার সঙ্গে ছিলো না। এসব কিছু লোকের বানানো কথা। শুধু বিএনপির মির্জা ফখরুল স্যার নয়, সারা বিশ্ব ও বাংলাদেশ আমার পক্ষে কথা বলেছে।
হিরো আলম বলেন, আমি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, যেখানে সব দল অংশগ্রহণ করবে। সবাই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে।
আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোট পুনঃগণনার কোনো সুযোগ নেই এখন। ইভিএমে ভোট হওয়ার পর ফলাফলের প্রিন্টেড কপি চেয়েছেন। কিন্তু ওটা ভোটের পরেই উনাকে দেওয়া হয়েছে। আবার চাইলে দেওয়া হবে। প্রিন্টেড কপিতে যোগ–বিয়োগ যদি ভুল থাকে তবে তিনি তা বলতে পারেন। গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। আবেদন পাওয়ার পর আমি সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি এবং বিধি মোতাবেক ব্যাবস্থা নিতে বলেছি। বিষয়টি আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকেও জানানো হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকেও আবেদনের বিষয় জানিয়েছি।
ইভিএমে পুনঃগণনা যেভাবে : ইভিএমে ভোট পুনঃগণনায় প্রতিটি ভোট আলাদা আলাদাভাবে গণনা সম্ভব না হলেও কেউ চ্যালেঞ্জ করলে দীর্ঘ সময় পরেও ‘অডিট কার্ডে’ সংরক্ষিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের পুনঃপ্রিন্ট করা হয়। ইভিএমের ভোটের তথ্য সংরক্ষিত থাকে দুটি কার্ডে, একটি হলো পোলিং কার্ড, আরেকটি অডিট কার্ড। পোলিং কার্ডে ভোটের ডেটা থাকে, অডিট কার্ডে ফলাফলের ডেটা থাকে। এক যুগ ধরে ইভিএম চালু হলেও ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রথম পুনঃগণনার রেকর্ড রয়েছে ইসির।