আমি আমার চাকরি জীবনের শুরু থেকে এই পর্যন্ত প্রায় পুরো সময়টাই কাজ করে এসেছি গার্মেন্টস কারখানায় এইচ আর এন্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগে। এ কারণেই অত্যন্ত কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছি শ্রমিকদের মানবিক বিষয়গুলো। শ্রমিকদের শ্রম আদায় করার ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলেও তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, মজুরি ইত্যাদি বিষয়ে স্বভাবতই উদাসীন ছিলো অনেক মালিক পক্ষ। ক্রেতাদের দিক থেকে এ সমস্ত বিষয়সমূহ পরিপালন করার নিয়ম থাকলেও নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা উদাসীনতা ছিলো একটা সময়ে। অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আধুনিক এবং পর্যাপ্ত ছিলো না। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারখানায় হতাহত হয়েছে অনেকেই। সংখ্যার পরিমাণ কম বলেই হয়তো উল্লেখযোগ্য হয়ে ঊঠেনি ঘটনাগুলো। তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক এবং রানা প্লাজার ভবন ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বিশাল একটা ধাক্কা খায় এই সেক্টর, সংশ্লিষ্ট সকলের ব্যবসায়িক মানসিকতার জায়গার বিরাট একটা অংশ দখল করে নেয় মানবিক ও সামাজিক মানসিকতা। ক্রেতাগণ কিছু কিছু কারখানার মালিক বা তৃতীয় পক্ষের উপর আস্থা হারিয়ে নিজেরাই গড়ে তোলা ‘এলায়েন্স’ এবং ‘একর্ড’। একটি একটি করে কারখানার সিভিল, ইলেক্ট্রিক আর ফায়ার সেফটি পরিদর্শনের ফলে বন্ধ হয়ে যায় অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলো। তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলো দ্রুততার সাথে চাহিদা অনুযায়ী ভুলগুলো শোধরিয়ে ফেলে ব্যবসার খাতিরে। তাছাড়া বেশ আগে থেকেই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিও একটা ভালো পর্যায়ে এসে পৌঁছে। বিপুল ক্ষতির আশংকা থেকে ফিরে আসে এই শিল্প।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই শিল্প যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তেমনি বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে এই শিল্প সামাজিকভাবেও রেখেছে ব্যাপক ভূমিকা। গার্মেন্টসে কাজ করার বিষয়টিকে এক সময় অনেক সম্মানের দৃষ্টিতে না দেখলেও ইদানীং এই দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আসুন আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরো ইতিবাচক করি। কর্মরত এইসব শ্রমিকদের হাঁড়ভাঙা শ্রমকে সম্মান জানিয়ে নিজেরা সম্মানিত হই।