আসুন নিজে সচেতন হই অন্যদের সচেতন হতে উৎসাহিত করি

ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস

হাসিনা আকতার লিপি | বুধবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

১৯৫৬ সালের এই দিনে জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার মো. ইব্রাহিমসহ কয়েকজন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যক্তির উদ্যোগের রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কারণে আজ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠার দিনটিকে স্মরণীয় রাখার জন্য সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং মানুষকে সচেতন করার জন্য নানান ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।

আমি ডায়াবেটিক কি? কেন হয়? প্রতিকার? প্রতিরোধ জটিলতা এসব কিছুই লিখবো না। যা লিখতে চাই তা হল প্রতিনিয়ত যা প্রত্যক্ষ করি। একজন ডায়াবেটিস রোগীকেও এ পর্যন্ত সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি রোগ সম্পর্কে খুব ভালো জানা, মানা এবং নিয়মিত একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এবং একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে চলতে দেখলাম না।

যা দেখি

* প্রথমেই বলবে আমার ডায়াবেটিস আগে ছিল এখন নাই।

* কেউ বলবে খুব সামান্য আছে আর কি?

* আমি তো দুই ঘন্টা হাঁটি, রাতে রুটি খাই কেন হবে?

* প্রচুর পরিশ্রম করি প্রশ্নই উঠে না ডায়াবেটিস হওয়ার।

* অল্প বয়স্ক কোন মেয়ে (গর্ভবতী) পরীক্ষা করতে বলা হলে আমার বংশে তো কারোর নাই কেন হবে?

* যাদের পরীক্ষার পর ধরা পড়েছে তারাও পরবর্তীতে আর চিকিৎসক পুষ্টিবিদ কারো সহযোগিতাই যান না। ফার্মেসিতে অথবা নিজেদের ঘরে গ্লুকোমিটার রেখে পরীক্ষা করে এবং সন্তুষ্ট হয়। একবারও চিন্তা করেনা ওষুধ এডজাস্ট করবে কে? এখানে তো ডাক্তার লাগবে।

* আরেকটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার একজন ডাক্তারের কাছে হয়তো ২৪ বার গিয়েছে কিন্তু তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তখনই সে ধরে নিলো ডাক্তার ভালো না। সাথে সাথে অন্য ডাক্তারের কাছে চলে গেল। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আপনি কি করেছেন?

প্রথমত, ব্যালেন্স ডায়েট খেয়েছেন কিনা।

দ্বিতীয়ত, দিনে ৫৬ বার ভাগ করে খেয়েছেন কিনা।

তৃতীয়ত, একবেলা ৩০ মিনিট অথবা সপ্তাহে ৫ দিন ১৫০ মিনিট হেঁটেছেন কিনা।

চতুর্থত, ধূমপান মদ্যপান জর্দা বন্ধ আছে কিনা।

পঞ্চমত, দিনে অন্তত সাত ঘন্টা ঘুমান কিনা।

অবশ্যই শৃঙ্খলা মানলে ডায়াবেটিস পূর্ণনিয়ন্ত্রণ থেকে আপনি সুস্থ থাকবেন।

একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে যা বলতে চাই: আসুন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করি। ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। একবার হয়ে গেলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার সাথে জীবনসঙ্গী হিসেবে থাকবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ডায়াবেটিস এখন আর বয়স, পেশা, লিঙ্গ কিছুই মানছে না, যে কারো সে কৃষক থেকে শুরু করে শিল্পপতি সবারই হতে পারে। এই কারণে ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যসম্মত জীবন পদ্ধতি মেনে চলুন।

যেমন :

* গর্ভাবস্থার আগেই দেহের ওজন আদর্শ ওজন আছে কিনা দেখুন।

* গর্ভাবস্থার খাদ্য তালিকা মেনে চলুন নিয়মিত চেকআপ করুন।

* শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ান, বাইরের এক ফোটা পানি পানিও না।

* ছয় মাস থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি খাবার শিশুর উপযোগী করে তৈরি করে দিন। অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করে তাকে খাওয়াতে হবে।

* তিন মাস পর শিশুর ওজন নিতে হবে অনেক ওজন শিশুর জন্য যেমন খারাপ কম ওজনও শিশুর জন্য খারাপ।

* কিশোর কিশোরীদের বাড়ন্ত শরীর তাদের খাবারের ব্যাপারে অভিভাবক অনেক বেশি সচেতন হওয়া জরুরি। এ সময় প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার প্রয়োজন।

* অবশ্যই দিনে ৩০ মিনিট খেলাধূলা ব্যায়াম কায়িক পরিশ্রম করা দরকার।

নিষেধ বলছি না: কম বা পরিমিত খেতে হবে ফাস্টফুড কোমল পানীয় ইত্যাদি।

নিষেধ বলছি : ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা, তামাক, গুল এবং অন্যান্য।

আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ১ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিকে আক্রান্ত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত ডায়াবেটিস চিকিৎসার জাতীয় নির্দেশিকা দেয়া তথ্য মতে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।

এখনই আজ থেকেই নিজে সচেতন হোন, অন্যকে উৎসাহিত করুন।

লেখক : চট্টগ্রামের প্রথম ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, কনসালট্যান্ট, ল্যাব এইড ও পার্ক ভিউ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিটাগাং চেম্বার ও আইএলও’র ডায়ালগ
পরবর্তী নিবন্ধপুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করলো এনআরবি ব্যাংক